সেনাবাহিনীর নিধনযজ্ঞের মুখে রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করবে জাতিসংঘ। এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে জাতিসংঘ সংস্থার মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। বুধবার মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির কার্যালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
স্টেট কাউন্সেলরের কার্যালয় জানিয়েছে, বুধবার নেপিদো’তে মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যে সমঝোতা চুক্তি সই হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার জন্য মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি) ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাকে (ইউএনএইচসিআর) আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এর প্রেক্ষিতেই এমওইউ সই করা সম্ভব হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে প্রত্যাবাসন চুক্তি বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ এবং এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সম্পৃক্ততার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে মিয়ানমার সরকারের বিবৃতিতে রোহিঙ্গা শব্দটি উল্লেখ না করে তাদেরকে রাখাইনের বাস্ত্যুচ্যুত জনগোষ্ঠী বলে সম্বোধন করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এপি’র খবরে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা নিয়ে এই চুি্ক্তকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মিয়ানমারে নিয়োজিত জাতিসংঘের আবাসিক এবং মানবিক সমন্বয়ক নাট ওত্সবি বলেন, এই সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে অনেক কাজ হবে এবং সেই কাজগুলোকে অবমূল্যায়ন করা উচিত হবে না। তিনি বলেন, আমরা প্রায় সাত লাখ মানুষের প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলেছি, যাদেরকে কেবল ফিরিয়ে নেওয়াটাই শেষ কথা নয়, ফিরে যাওয়ার জন্য যথাযথ পরিবেশও তৈরি করতে হবে। সমাজে তাদের পরিচয়, তাদের নিরাপত্তা, চাকরি, জীবন-যাপন, বসবাসের জায়গা, অবকাঠামো-সবকিছুরই সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এর আগে স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ও জাতিসংঘ সফলভাবে কাজ করেছে। ১৯৯৩ সালে মিয়ানমার ও ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিল।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত ও পরিকল্পিত নিধনযজ্ঞ চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। নিধনযজ্ঞের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের নিজ-ভূমে ফেরাতে গত বছরের নভেম্বরে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি হয়। তবে এখনো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।