কয়েকদিন বাদেই শুরু হবে ফুটবল বিশ্বকাপ। বাংলাদেশে ফুটবল ভক্ত অনেক। ঘরে বসে বড় স্ক্রিনে খেলা দেখার মজাই আলাদা। বর্তমানে দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন সাইজের স্মার্ট টেলিভিশন। ঘরের সৌন্দর্য্য ও ঝকঝকে ছবির পাশাপাশি ব্যবহারকারীরা এখন ইন্টারনেটের সুবিধাও ভোগ করতে পারছে স্মার্ট টেলিভিশন থেকে। আমাদের এবারের আয়োজন দেশের বাজারে থাকা বিভিন্ন মডেলের স্মার্ট টেলিভিশন নিয়ে। বিস্তারিত লিখেছেন মাহবুব শরীফ
বর্তমানে দেশের বাজার এলজি, স্যামস্যাং, ফিলিপস, সনি, সার্প, সিংগার, ওয়ালটনসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির স্মার্ট টেলিভিশন পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় সব কোম্পানিই তাদের বিভিন্ন মডেলের এলসিডি, এলইডি ও প্লাজমা টেলিভিশনের পাশাপাশি থ্রিডি, ফোরকে এবং স্মার্ট টেলিভিশনগুলোতে দিয়েছে বিভিন্ন অফার। পবিত্র ঈদুল ফিতর ও বিশ্বকাপকে সামনে রেখে জমে উঠেছে তাদের বেচাকেনা। কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যে দিয়েছে বাহারী বিজ্ঞাপন। এই বিজ্ঞাপনে পণ্যগুলোর ফিচার সম্পর্কেও ধারনা দিয়েছে তারা। ক্রেতারা বাহারী বিজ্ঞাপনে মুগ্ধ না হয়ে যাচাই বাছাই করে তার পছন্দের টিভিটি কিনলে পরবর্তীতে আরামে ব্যবহার করতে পারবে সেটি।
স্মার্ট টিভি কেনার আগে করণীয়
স্মার্ট টেলিভিশন কেনার আগে ক্রেতাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন রয়েছে। সাধারণত টেলিভিশন কেনার আগে সাবাই পারফেক্ট ব্র্যান্ডটিই পছন্দ করে। শুধু কিনলেই হবে না স্মার্ট টিভি কেনার আগে ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে কেনা উচিত্। বেশিরভাগ ব্র্যান্ডের স্মার্ট টেলিভিশন অপারেটিং করা একটু কঠিন এবং অধিক সময় লেগে যায়। সুতরাং স্মার্ট টিভি কেনার আগের এর বিভিন্ন ফিচার দেখার পাশাপাশি টিভিটা কতোটা ব্যবহার বান্ধব তা খেয়াল করা জরুরি। আর একটি বিষয় খেয়াল করা উচিত আর তা হলো- টেলিভিশনটি ব্যবহারের জন্য এতে ক্যাবল ও ওয়াই-ফাই কনেকশন আছে কি-না?
স্মার্ট টিভিতে যে প্রযুি্ক্ত ব্যবহার করা হয়
স্মার্ট টিভির প্রসেসর বেসিক টিভি থেকে অনেক অ্যাডভান্স হয়ে থাকে এবং এখানে একটি অপারেটিং সিস্টম থাকে। বর্তমান মার্কেটে সাধারণত অ্যান্ড্রয়েড ও ওয়েব ওএস অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্ট টিভি রয়েছে। স্মার্ট টিভিতে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়।
স্মার্ট টিভিতে কী কী ফিচার থাকা প্রয়োজন
একটি পরিপূর্ণ স্মার্ট টিভিতে ইন্টারনেট কনেক্টিভিটিতে হবে ক্যাবল ও ওয়াই-ফাই উভয়ই থাকতে হবে। নেট ব্রাউজিং সুবিধা থাকতে হবে। অ্যাপস ইনস্টল সুবিধা থাকতে হবে। স্ক্রিন শেয়ারিং সুবিধা থাকতে হবে। কিছু জনপ্রিয় অ্যাপ বিল্টইন থাকতে হবে। যেমন- ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন ইত্যাদি। এছাড়াও আইপিএস প্যানেল, লাইভ জুম অপশন, প্লে অ্যান্ড পুশ অপশনসহ রেকর্ডিং ফিচার একটি স্মার্ট টিভিকে পরিপূর্ণ করে।
কোন টাইপের টিভি কিনবেন?
বর্তমানে বাজারে এলসিডি, প্লাজমা, এলইডি টিভি পাওয়া যায়। এলইডি টিভির মধ্যেও আবার থ্রিডি, ফোরকে টাইপের টিভি পাওয়া যায়। প্রযুক্তির টেলিভিশনের মধ্যে এলসিডি দাম তুলনামূলকভাবে কম। সাশ্রয়ী বাজেট হলে উজ্জ্বল ও অত্যন্ত হালকা-পাতলা এ টেলিভিশনগুলো আপনার জন্য জুতসই হতে পারে। তবে বর্তমান সময়ে টিভি কিনলে এলইডি স্মার্ট বা ফোরকে রেজ্যুলেশনের টিভি কেনা উচিত্। কারণ, বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার একটি প্রয়োজনীয় বিষয় হয়ে উঠেছে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে ডেস্কটপ, ল্যাপটপসহ ক্যামেরা ও যাবতীয় প্রযুক্তি পণ্যে এইচডিএমআই পোর্ট থাকে। এইচডিএমআই পোর্ট দিয়ে ব্যবহারকারীরা চাইলে স্মার্ট টিভির সঙ্গে প্যাচিং করে বড় আকারের পর্দায় ফোরকে রেজ্যুলেশনের মুভি ও গেম উপভোগ করতে পারবে। ব্লু-রে প্লেয়ারের আউটপুটেও এইচডিএমআই পোর্ট ব্যবহার করা হয়েছে। যাদের বাজেট সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে তারা চাইলে এলসিডি বা এলইডির নরমাল মুডের টিভি কিনতে পারেন। তবে বাজারে নন ব্র্যান্ডের অনেক এলসিডি ও এলইডি টেলিভিশন পাওয়া যাচ্ছে। এই টিভিগুলোর মাননিয়ন্ত্রণ সঠিক প্রক্রিয়াতে না হওয়ার সম্ভাবনা অনেক। এছাড়াও এই টিভিগুলোর রেজ্যুলেশন, আয়ুস্কাল সঠিক থাকে না। বাহারী প্রদর্শনী ও মূল্য ছাড়ের মধ্য দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করে রীতিমতো।
বর্তমানে এলইডি, এলসিডি ও প্লাজমা টিভি চেনার বিষয়টি কষ্টকর হতে পারে। এখন টিভি নির্মাতারা ‘এলইডি প্লাস’ ও ‘সুপার এলইডি’ নামেও টিভি বাজারজাত করছে। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, দুই লাখ বা তার বেশি দামের ভালো ব্র্যান্ডের টিভি না হলে সত্যিকারের এলইডি স্ক্রিনযুক্ত টিভি পাওয়ার নিশ্চয়তা কম। কম দামি টিভিতে এলইডি, এলসিডি বা প্লাজমার পার্থক্য বের করা কঠিন। এর মধ্যে প্লাজমা টিভিতে উন্নত কালো স্তর পাওয়া সম্ভব কিন্তু কোনো কারণে এই টিভিতে সমস্যা দেখা দিলে তা মেরামত করা কঠিন হবে। তাই এলসিডি বা এলইডির দিকে যাওয়াই ভালো।
স্মার্ট টিভির সাইজ নির্ধারণ
শুধু টেলিভিশন কেনার আগেই নয় বাসার জন্য কোনো কিছু কিনতে গেলে আগে নির্ধারন করতে হয় এটা কোথায় রাখবেন। টেলিভিশন কেনার আগেরও আপনাকে নির্ধারন করতে হবে যে আপনি এটাকে কোথায় সেট করবেন।
টেলিভিশন থেকে বসে দেখার স্থানের দূরত্ব অনুযায়ী টেলিভিশনের মাপ নির্বাচন করা উচিত। যদি টিভি থেকে বসে দেখার দূরত্ব আট ফুট হয় তবে টেলিভিশনের মাপ হতে হবে এর ৩২ ইঞ্চি থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ ইঞ্চি। তবে বলা হয়, টিভি যত বড় হয় দেখতে তত সুবিধা। এ সূত্র অনুযায়ী বাজেটের মধ্যে এ মাপের যেকোনো মডেল কিনতে পারেন। আপনার বাজেটের উপর নির্ভর করে আপনি এর মধ্যে কোন সাইজের টিভিটি কিনবেন।
হাই ডেফিনেশন টিভি
হাই ডেফিনেশন টিভি কেনার আগে আপনাকে স্থির করতে হবে আপনি কত বড় টেলিভিশন কিনতে চাচ্ছেন। ৪৬ ইঞ্চির
কম সাইজের টিভিগুলোতে হাই ডেফিনেশন (এইচডি) টিভি ও ফুল-এইচডি টিভির পার্থক্য করা কঠিন। কিন্তু আট ফুটের কম দূরত্ব থেকে ব্লু-রে মুভি দেখলে এই পার্থক্য ধরা পড়ে। আট ফুটের কম দূরত্ব থেকে টিভি দেখলে ফুল এইচডির দিকে যেতে পারেন। তবে যদি বেশি দূর থেকে টিভি দেখেন তবে এইচডি টিভিই শ্রেয়।