অনাদরে অবহেলায় আনাচে-কানাচে ফুটে থাকে কত না বুনোফুল। আগাছা মনে হলেও বনে-বাদাড়ে ফুটে থাকা শটি ফুলের সৌন্দর্যের কমতি নেই। ভাওয়াল ও মধুপুর গড়ের সৌন্দর্য শটি। তাছাড়া লাল মাটির পাহাড়ের পাদদেশে, পথের ধারে আপনাআপনিই জন্মায়। শটিকে গজারি গাছের সহযোগী উদ্ভিদও বলা হয়। বর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। ছোট ডাঁটির ওপর শটি ফুল দুর্লভ সৌন্দর্য ছড়ায়। বৈশাখে নতুন পাতা গজাবার আগে এ ফুল দেখা যায়। পথে ঘাটে অযত্নে ফোটা ফুলটি মাথা নাচিয়ে স্বাগত জানায়। গোলাপি, লাল ও হলুদে মেশানো। হলুদের গাছ ও ফুল অবিকল শটির মতো। শুধু কন্দমূলে পার্থক্য রয়েছে। হলুদের কন্দমূল হলুদ আর শটির কন্দমূল সাদা। অনেকে শটিকে বন হলদি বা জংলি হলুদও বলে। শটি গাছ ৩-৪ ফুট পর্যন্ত বাড়ে। শটির কন্দমূল ধুয়ে মেশিনে থিতিয়ে নির্যাস বের করে পাত্রে রেখে দিলে সাদা দ্রবের সার জমা হয়। পানি ফেলে দিলে সার সাদা ময়দার মতো দেখায়। ময়দার মতো সাদা বার্লি রোদে শুকিয়ে পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহ করা হয়। ভাওয়াল এলাকার গরিবরা এ বার্লি বাজারে বিক্রি করে। নিজেরাও খায়।
ভাওয়ালের বনে গজারি গাছের ফাঁকে ফাঁকে প্রচুর শটিগাছ জন্ম নিলেও শটির ব্যবহার কমে আসছে। তাছাড়া ব্যাপকহারে গজারি বন ধ্বংস হওয়ায় শটিগাছের সংখ্যাও কমছে। পলিথিন ব্যবহারের আগে শটির পাতা ব্যবহার হতো। লবণ, গুড়, মাছ ইত্যাদি শটির পাতায় বেঁধে বাড়ি নিয়ে যেত গ্রামের মানুষ। আপনাআপনি জন্মানো গাছটি ৬-৭ মাস বাঁচে। পরে গাছটি মরে গেলেও মাটির নিচের কন্দটি জীবিত থাকে। কন্দ থেকে পুনরায় চৈত্র মাসের শেষে শটিগাছের জন্ম হয়। শটি গাছের ছায়ায় জন্মাতে পছন্দ করে। জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন: ‘ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে…।’
শটিগাছের ভেষজ গুণও রয়েছে। শটির বার্লি ডায়রিয়ায় খাওয়ানো হয়। পেট ফাঁপা ও নানা চর্মরোগে ব্যবহার্য। আমাদের ধারে কাছেই শটি ফুল হাসে, অথচ আমরা চোখ মেলে দেখি না।