কোটার সিদ্ধান্তহীনতায় আটকে আছে কয়েক হাজার পদের নিয়োগ। ফলে চাকরি প্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। পরবর্তী আদেশ-নির্দেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান আদেশ বহাল থাকে—এই নিয়মও উপেক্ষিত হচ্ছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কোটার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত কি হয় দেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে। পিএসসির মাধ্যমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদ ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগ এমনকি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও ধীর চলো নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ এবং এসব মন্ত্রণালয়-বিভাগের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান, সংস্থা-দপ্তর-অধিদপ্তরে অন্তত ২০ হাজার পদে নিয়োগের সকল প্রস্তুতি শেষ। এখন শুধু ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষা। কিন্তু ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এক ধরনের সেলফ সেন্সর আরোপ করে বসে আছেন। আইনগত কোনো অসুবিধা না থাকলেও কেন তারা এমনটি করছেন তার কোনো সদুত্তরও তারা দিচ্ছেন না। এ অবস্থায় চাকরি প্রত্যাশীদের মধ্যে উদ্বেগ-হতাশা প্রকট হচ্ছে।
আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সরকারের ওপর। কোটা সংস্কার নিয়ে সাধারণ ছাত্র পরিষদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে কোটা প্রথা বাতিলের ঘোষণা দেন। তবে সরকারি চাকরিতে ক্ষুদ্র-নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিতব্য একটি সচিব কমিটির কোটার বিষয়টি পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রদানের কথা। অবশ্য কমিটি এখন পর্যন্ত গঠিত হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ইত্তেফাককে জানিয়েছিলেন কমিটিতে আলোচনা করে সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্ষু-নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট মত রয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধা, নারী, জেলা ইত্যাদি কোটা বিষয়ে সংবিধানে সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই।
রবিবার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের করিডোরে বিক্ষিপ্তভাবে ঘোরাঘুরি করছিলেন বরগুনার আসলাম হোসেন। হঠাৎ তাকে দাঁড় করিয়ে জানতে চেয়েছিলাম তার ঘোরাঘুরির কারণ কি? তিনি বললেন, এই মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পে নিয়োগ লাভের জন্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেও ফলাফল না পেয়ে হতাশ হয়ে জানতে এসেছেন ফলাফল কবে হবে। কিন্তু কোথাও কোনো সদুত্তর মিলছে না। তিনি বলেন, তার দুটি পরীক্ষাই ভালো হয়েছে। তার আশা এই নিয়োগ তার হবে। কিন্তু যদি কোনো কারণে না হয় তবে তার আর চাকরির বয়স থাকবে না। একটি ফলাফল হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া যেতো।
পিএসসি থেকে শুরু করে প্রায় সব নিয়োগ ক্ষেত্রেই একই পরিস্থিতি চলছে। এরকম একাধিক নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলেও তারা খোলসা করে কিছুই বলছেন না। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, প্রায় সব নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কোটার বিষয়ে পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। বিদ্যমান আদেশ বহাল থাকার পরেও কেন তাদের সিদ্ধান্তহীনতা—এই প্রশ্নের জবাবে সূত্রগুলোর মন্তব্য ওপরের মৌখিক নির্দেশনায় নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, এখন দেশে প্রথম থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির প্রায় তিন লাখ পদ শূন্য রয়েছে। চাকরির আবেদনযোগ্য বেকারের সংখ্যা সাড়ে চার কোটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার দ্রুততার সঙ্গে শূন্য পদ পূরণের তাগিদ দিয়েছেন। সচিব সভায়ও পদ শূন্যতার কারণে কাজকর্মে গতি ফেরানো যাচ্ছে না-এই অভিমত ব্যক্ত করে শূন্য পদ পূরণের সিদ্ধান্তও নিয়েছে। কিন্তু নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অতিসতর্কতা অবলম্বনের নীতির কারণে এখন নিয়োগ কার্যত বন্ধ।