যানজটের কারণে পরিচিতি পেয়েছে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা মোড়। তবে এবারের ঈদযাত্রায় সেখানে তেমন ভোগান্তি নাও হতে পারে। কারণ, চন্দ্রা ছাড়িয়ে টাঙ্গাইলের বেশির ভাগ অংশে চার লেনের কাজ শেষ হয়েছে। তবে চন্দ্রার যানজট উপলব্ধি হতে পারে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ধেরুয়ায়।
ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে ঈদে ঘরমুখো মানুষের। এর মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইল শহর বাইপাসের ঘারিন্দা এলাকা, সিরাজগঞ্জের শেষ অংশে বগুড়া সীমানার দিকে তিন কিলোমিটার, বগুড়ায় বনানী লিচুতলা থেকে মাটিডালি বিমানমোড় পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এবং গাইবান্ধায় কোমরপুর থেকে পলাশবাড়ীর রাইগ্রাম মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার।
গাজীপুর
গাজীপুরে চন্দ্রা ত্রিমোড়ের আশপাশে বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বাস, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা স্ট্যান্ড এবং টিকিট কাউন্টার রয়েছে। এসব স্থানে এসে যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে। চন্দ্রা থেকে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলছে।
চন্দ্রা এলাকায় বাসযাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, সড়কের ওপর যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ও মালামাল ওঠানামা করায় দূরপাল্লার যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। এ কারণে থেমে থেমে যানজট বেঁধে যাচ্ছে। কখনো কখনো তা চরম আকার ধারণ করছে।
চন্দ্রার আগে কোনাবাড়ী এলাকায় রাস্তা ভাঙাচোরা আছে। এ এলাকায় এক কিলোমিটার রাস্তা পার হতে এক ঘণ্টার বেশি লেগে যাচ্ছে। চন্দ্রার পরে গোয়ালবাথান, সাহেববাজার, সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় চার লেনের কাজ চলছে ধীর গতিতে। চার লেনের কারণে বিভিন্ন জায়গা থেকে কার্পেটিং তুলে ফেলা হয়েছে।
জয়দেবপুর-চন্দ্রা-এলেঙ্গা চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের উপসহকারী ব্যবস্থাপক মো. রুকনুজ্জামান বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি না। তারপরও ঈদ সামনে রেখে চার লেনের কাজ চলমান রেখে সড়ক মেরামতের কাজ করে যাচ্ছি।’
টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইল অংশে চার লেনের সড়কের প্রায় পুরোটাই যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। বাকি অংশে পুরোদমে কাজ চলছে। চার লেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক জিকরুল হাসান বলেন, ২০ রোজার মধ্যেই নির্মাণকাজ শেষ হবে। এ ছাড়া গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ২৩টিদুই লেনের সেতুর পাশ দিয়ে নতুন দুই লেনের সেতু হয়েছে। এই সেতুগুলো ঈদের আগেই চালু করে দেওয়া হবে। ফলে পুরো মহাসড়কেই যানবাহন চার লেনের সুবিধা নিয়ে চলতে পারবে।
তবে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মির্জাপুরের ধেরুয়ায় রেলক্রসিংয়ের ওপর নির্মাণাধীন উড়ালসড়ক এবং টাঙ্গাইল শহর বাইপাসের ঘারিন্দা এলাকায় নির্মাণাধীন আন্ডারপাস। দুটি স্থানেই দুই লেন আটকে নির্মাণকাজ চলছে। ফলে যানবাহনকে চলতে হচ্ছে দুই লেনে। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, যেসব স্থানে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে, সেসব স্থানে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হবে।
সিরাজগঞ্জ
মহাসড়কের ৩৭ কিলোমিটার পড়েছে সিরাজগঞ্জে। বঙ্গবন্ধু সেতুর গোলচত্বর থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত। গোলচত্বর থেকে নলকা সেতু পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার ও নলকা থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত চার কিলোমিটার মূল সড়কটি ভালো। তবে উভয় পাশের তিন ফুট চওড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলেই এ সড়কে যান চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে।
হাটিকুমরুল গোলচত্বর থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটারে সংস্কারকাজ চলছে। এর মধ্যে সাড়ে তিন কিলোমিটার এখনো বেহাল। চান্দাইকোনার বগুড়া বাজার থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বরের দিকে দুই কিলোমিটার অংশের কার্পেটিং উঠে গেছে। ভূইয়াগাতী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুটি স্থানে ৪০০ মিটার, রয়হাটি সেতু থেকে উত্তর দিকে ১ কিলোমিটার, ঘুরকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুটি স্থানে ২০ মিটারে কার্পেটিং উঠে গেছে। ছোট–বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলছে মন্থর গতিতে।
সিরাজগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহাদ উল্লাহ বলেন, বৃষ্টির কারণে কাজে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে যেসব স্থানে সংস্কারকাজ বাকি রয়েছে, অতি দ্রুতই তা সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা করছেন।
বগুড়া
চান্দাইকোনা থেকে বগুড়া শহরতলির বনানী পর্যন্ত সড়কের জায়গায় জায়গায় খারাপ। এ অংশের মধ্যে শেরপুরের ধরমোকাম এলাকায় মহাসড়কে বৃষ্টির পানি জমে যায়। শাজাহানপুরের বি ব্লক থেকে দশমাইল পর্যন্ত কিছু অংশে গর্ত হয়ে আছে। সওজ এই অংশে অর্ধকোটি টাকার সংস্কারকাজ করছে।
বনানী থেকে বগুড়া শহরতলির মাটিডালি বিমানমোড় পর্যন্ত দুটি বাইপাস সড়কের অবস্থাই খারাপ। এর মধ্যে বেশি দুর্ভোগের আশঙ্কা রয়েছেদ্বিতীয় বাইপাস সড়কে। এই বাইপাসের ১৬ কিলোমিটারের পুরোটাই বেহাল। এই অংশের পুরোনো কার্পেটিং ও খোয়া তুলে ফেলে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। বনানী থেকে তিনমাথা রেলগেট হয়ে চারমাথা বাস টার্মিনাল হয়ে বাইপাসের ১০ কিলোমিটারে অল্পস্বল্প খারাপ। আর বগুড়া শহরের সাতমাথা হয়ে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ৪ কিলোমিটার বেহাল।
বগুড়া সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৯০ সালে নির্মিত এ মহাসড়কের জীবনকাল ২০১০ সালেই শেষ হয়েছে। এখন সংস্কারকাজের মাধ্যমে কোনো রকমে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।
গাইবান্ধা
মহাসড়কের ৩২ কিলোমিটার গাইবান্ধায় পড়েছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোমরপুর থেকে পলাশবাড়ীর রাইগ্রাম মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটারে অসংখ্য স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে। কোথাও কোথাও গর্তে ইট বিছানো হয়েছে। কোথাও মহাসড়ক দেবে গেছে।
গোবিন্দগঞ্জের কোমরপুর এলাকার ব্যবসায়ী মিলন মিয়া বলেন, গর্ত থাকায় যানবাহন চলে লাফিয়ে লাফিয়ে। তখন আশপাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ট্রাকচালক উত্তম কুমার বলেন, এই রাস্তায় চলতে গিয়ে গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভেঙে যাচ্ছে। অল্প দিনেই টায়ার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
গাইবান্ধা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে মহাসড়কে সংস্কারকাজ চলছে। আসন্ন ঈদে যানবাহনের চাপ বাড়লেও চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
রংপুর
রংপুরের পীরগঞ্জের ধাপেরহাট এলাকা থেকে রংপুর শহরের মডার্ন মোড় পর্যন্ত পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ২৫ কিলোমিটার মহাসড়কজুড়ে খানাখন্দ ছিল। পুরোটাই সংস্কার করে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। বাকি ১৯ কিলোমিটারের মধ্যে সাতটি স্থানে সড়ক উঁচু-নিচু রয়েছে। স্থানগুলো হচ্ছে জায়গিরহাট, ধর্মদাস, গড়েরমঠ, বলদিপুকুর, বৈরীগঞ্জ, কলাবাড়ি ও লালদিঘি। এগুলো ঠিক করতেও সংস্কারকাজ চলছে।