রহমত বরকত মাগফিরাত আর নাজাতের বারতা নিয়েই আগমন করে রমজান। রমজান ক্ষমার মাস। বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল, কিন্তু এই মাসেও তাকে ক্ষমা করা হলো না সে আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে চিরবঞ্চিত ও বিতাড়িত। (মুসতাদরাকে হাকিম: ৪/১৭০)
রমজানজুড়ে শুধুই যেন ক্ষমার আয়োজন। ভালো (নেক) কাজের মাধ্যমে মাফ হয়ে যায় গুনাহ। রোজার শুরুতেই মাগফিরাতের (ক্ষমার) ঘোষণা। যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা আদায় করবে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারি: ১/২২; মুসলিম: ১/৫২৩) তারাবিহ নামাজের মাধ্যমে মাফ হয়ে যায় কিছু গুনাহ। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি খাটি ইমান ও ইখলাসের সঙ্গে রমজানের রাতে (তারাবিহতে) দাঁড়িয়ে যাবে আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (বুখারি: ১/২২; মুসলিম: ১/৫২৩) লাইলাতুল কদরে মাফ হয় গুনাহ রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াব লাভের খাঁটি আশায় লাইলাতুল কদরে কিয়ামুল্লাইলে (তাহাজ্জুদে) অতিবাহিত করবে আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (বুখারি: ২/৬৭২; মুসলিম: ১/৫২৩)
ইবাদতের মাধ্যমে মাফ হবে কেবল সগিরা (ছোট) গুনাহ। কবিরা গুনাহের জন্য তওবা জরুরি। তাওবা অর্থ ‘তাওবা’ আরবি শব্দ । এর অর্থ হচ্ছে অনুতপ্ত হওয়া এবং ফিরে আসা। কোনো গোনাহের কাজ করার পর অনুতপ্ত হয়ে ভবিষ্যতে আর কখনো তা না করার দুঢ় সংকল্প করাই তাওবা।
তাওবা একটি প্রতিষেধক। মানুষ মাত্রই ভুল-ত্রুটি হওয়া স্বাভাবিক। মানবমন্ডলীর পাশাপাশি পৃথিবীতে এসেছে অভিষপ্ত শয়তান। শয়তান মানুষকে বিপথগামী করার মিশন কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত রাখবে। শয়তানের পাশাপাশি রয়েছে মানুষের প্রবৃত্তি। শয়তান ও প্রবৃত্তির বিষাক্ত ছোবলে আক্রান্ত হয়ে মানুষ জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন পাপ কাজে। শয়তান ও প্রবৃত্তির বিষাক্ত ছোবলে আক্রান্ত মানুষকে বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা করতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যে প্রতিষেধক দিয়েছেন তাই তাওবা। তাওবাকারীর জন্য ক্ষমার ঘোষনার সঙ্গে সঙ্গে তার জন্য পুরস্কারের ঘোষনাও দিয়েছেন। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন’। (সুরা বাকারা: ২২২)
খাঁটি তওবার ধাপ তিনটি : ১. গোনাহ ত্যাগ করা। ২. কৃত গোনাহের ব্যাপারে অনুতপ্ত হওয়া । ৩. ভবিষ্যতে গোনাহ না করার দুঢ় অঙ্গিকার করা। তাওবা করলেই আল্লাহ মানুষের গুনাহ মাফ করে দেবেন। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন: ‘গোনাহ থেকে তওবাকারীর অবস্থা এমন, যেন তার কোনো গুনাহ নেই’। (ইবনে মাজা: ২/১৪১৯) পবিত্র কোরআনুল কারিমেও এসেছে, আল্লাহ তাওবাকারীর গোনাহ ক্ষমা করে দেন এবং তার গোনাহ গুলোকে সওয়াব দ্বারা বদল করে দেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দেবেন।’ (সুরা ফুরকান-৭০)
গুনাহ হয়ে যাওয়ার পরপরই তাওবা করতে হবে। অনেকে মনে করেন, গোনাহ করতে থাকি পরে একবারে সব গুনাহের জন্য তওবা করে নেব। এটি মারাত্মক ভুল। কেননা তিরমিজি শরিফের একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মহিমান্বিত আল্লাহ তায়ালা মুত্যুর নিদর্শন প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত বান্দার তওবা কবুল করেন।’ আমাদের কখন মৃত্যু হবে তা কি আমরা জানি? না। যখন মৃত্যুর নিদর্শন এসেই যাবে তখন তো আর তওবা কবুল হবে না। তওবা করতে হবে অনতিবিলম্বে। এরশাদ হচ্ছে, ‘অবশ্যই আল্লাহ তাদও তওবা কবুল করবেন যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে, অতপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ।’ (সুরা নিসা-১৭) পরে তওবা করব এমন চিন্তা করলে তওবা করার সুযোগ নাও হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘এমন লোকদের জন্য কোনো ক্ষমা নেই যারা যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন তাদের কারো মাথার ওপর মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন বলতে থাকে আমি এখন তওবা করছি।’ (সুরা নিসা-১৮)
কিছু গুনাহ আছে যেগুলো শুধু শুধু তাওবার দ্বারাও মাফ হয় না। বরং তার আগে আরেকটি শর্ত আছে। কেউ যদি কারো হক নষ্ট করে কিংবা কারো জিনিস অন্যায়ভাবে দখল করে থাকে তাহলে শুধু তাওবা করলেই মাফ হবে না। বরং তাওবা করার আগেই ওই লোককে তার প্রাপ্য জিনিসটি তাকে ফেরত দিতে হবে। তারপর তাওবা করলে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন এবং তার গুনাহ মাফ করে দেবেন। অর্থ পাওনা হলে তা পরিষোধ করতে হবে। পাওনাদার ব্যক্তি জীবিত না থাকলে তা তার উত্তরাধিকারীদের কাছে অর্পন করতে হবে এবং তার জন্য ইস্তিগফার করতে হবে। উত্তরাধিকারী না থাকলে তার নামে সদকা করে তার মাগফিরাতের দোয়া করতে হবে। আর যদি আদায়ে একেবারেই অসামর্থ হয় তাহলে এর প্রাপকের কাছে মাফ চেয়ে নিতে হবে। এভাবেই আমল ও তাওবার মাধ্যমে আমাদের সব গুনাহ মাফের অপূর্ব সুযোগ রমজানে।