স্কুল না পালিয়ে একটু পড়াশুনা করে টাকা উপার্জন করলে মেয়েটা আজ আপনারই থাকতো

স্কুল না পালিয়ে- সময়ের আলোচিত গান ‘অপরাধী’ প্রকাশের পর থেকেই একের পর এক রেকর্ড গড়ছে। ঈগল মিউজিকের অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা ভিডিওটি এরই মধ্যে দেখেছেন ৪ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ।

প্রতি সেকেন্ডেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে গানের ভিউয়ারের সংখ্যা। তবে, শুধুমাত্র গান কিংবা গায়কই যে আলোচনায়; বিষয়টা ঠিক এরকম নয়। গানটি যারা কাভার করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকেও এরই মধ্যে সাড়া ফেলেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

গত ২৬ এপ্রিল ঈগল মিউজিক প্রকাশ করে অংকুর মাহমুদ ফিচারিং আরমান আলিফের ‘অপরাধী’ গানের মিউজিক ভিডিও। গানটি প্রকাশের পর রাতারাতিই আলোচনায় উঠে আসেন নেত্রকোনার ছেলে আরমান আলিফ। ঢাকা কমার্স কলেজে অধ্যয়নরত আলিফের এটি তৃতীয় গান।

মিউজিক ভিডিওটিতে মডেল হয়েছেন আনান, সুমাইয়া আনজুম ও তুহিন চৌধুরী। এই গানের মাধ্যমে আলিফ শুধুমাত্র তার নিজের রেকর্ডই ছাড়িয়ে যাননি বরং ছাড়িয়েছেন পেছনের বাংলা গানের সব রেকর্ডকে।

এই মিউজিক ভিডিওটি গত সপ্তাহে ইউটিউবের গ্লোবাল র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা ১০০ গানের মধ্যে ৮০তম স্থানে অবস্থান করছে। যা এরইমধ্যে ইউটিউবে বাংলাদেশের সব রেকর্ড ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। জনপ্রিয়তা পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও।

আলিফ নিজে চন্দ্রবিন্দু বিডি নামের একটি ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত। তার গাওয়া ‘নিকোটিন’ (২০১৭) গান চন্দ্রবিন্দুর ব্যানারে মুক্তি পায়। এরপর আসে ‘নেশা’ (২০১৭) গানটি। তৃতীয়টি মুক্তি পেল ঈগল মিউজিকের ব্যানারে।

গানটি প্রকাশের পর এর কাভার গাইছেন অসংখ্য মানুষ। শনিবার বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কণ্ঠে গানটির ভিডিও ব্যাপক ভাইরাল হয়।

সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, আবু হায়দার রনিসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার ভারতের দেরাদুনে ড্রেসিংরুমের আড্ডায় কাভার করে ভিডিও আপলোড করেন। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ওই ভিডিও। ঘণ্টার ব্যবধানে ওই ভিডিওতে ভিউয়ারের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া গানটি কাভার করে ব্যাপকভাবে আলোচিত হন টুম্পা খান সুমি।

মূল গানটি প্রেমিকাকে উদ্দেশ্য করে গাওয়া হলেও টুম্পা মূলত গেয়েছেন সাবেক প্রেমিককে উদ্দেশ্য করে। ‘মাইয়া ও মাইয়ারে তুই অপরাধী রে…’ এই জায়গাতে টুম্পা গেয়েছেন ‘পোলা ও পোলা রে তুই অপরাধী রে…’। টুম্পার নিজের ইউটিউব অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা এই গানটি এরইমধ্যে দেখেছেন ২৮ লাখেরও বেশি মানুষ।

তবে এই গানটি যে এতটা ভাইরাল হবে, তা গাওয়ার আগে আলিফ কিংবা টুম্পা, কেউই ধারনা করতে পারেননি। নিজেরাই স্বীকার করেছেন এই কথা। এ বিষয়ে আলিফ বলেন, ‘এর আগেও আমার কয়েকটি গান ইউটিউবে প্রকাশ করেছি।

আমাদের ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দুর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ হয়েছিল। সেগুলো মোটামুটি জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু ঈগল মিউজিকের ব্যানারে প্রকাশিত ‘অপরাধী’ গানটি যে এমনভাবে সাড়া ফেলবে, একদম ভাবিনি। এটা খুব ভালোলাগার বিষয়।’

অন্যদিকে, টুম্পা বলেন, ‘আমি সব সময় সফ্‌ট গান করি। গাওয়ার সময় নিজেই ইন্সট্রুমেন্ট বাজাই। বেশ কয়েকদিন আগে একটি নতুন ইন্সট্রুমেন্ট ‘উকুলিলি’ কিনেছি। সেই ইন্সট্রুমেন্ট বাজিয়ে প্রথমে ‘অপরাধী’ গানটি গেয়িছে। তখন গানটি ভাইরাল হওয়ার কথা কল্পনাও করিনি। গানটি দরদ দিয়েই গাওয়ার চেষ্টা করেছি।

জাস্ট গানটি গেয়ে দ্রুত ফেসবুক ও আমার ইউটিউব চ্যানেলে আপ করি। তারপর থেকে তো দেখলাম গানটি রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে। দেখলাম বহু মানুষ গানটি শেয়ার দিচ্ছেন। দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ আমাকে ফোন দিচ্ছে। সবাই আমার গায়কীর প্রশংসা করছেন।

এই গানের মাধ্যমে ‘তারকা’ বনে যাওয়া আলিফ কিংবা টুম্পার গানে নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। দুজনেই শুনে শুনে গান শিখেছেন।

এ বিষয়ে আলিফ আরো বলেন, ‘আমার মায়ের খুব আগ্রহ গানের প্রতি। এরপর আমার প্রচণ্ড আগ্রহ জন্মে। গান নিয়ে আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। আমিই ব্যান্ডের জন্য গান লিখি ও সুর করি। ভালোবাসা থেকেই গান লেখা ও সুর করা। এরপর ব্যান্ড তৈরি করে নিজে নিজেই গেয়েছি।’

অন্যদিকে টুম্পা আরো বলেন, ‘আমার বাড়ি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে। ছোটবেলা থেকে গান শুনি। শুনে শুনেই গান গাওয়া শুরু। এলাকায় গান শেখার তেমন ব্যবস্থা ছিল না। ফলে গান শেখার তেমন সুযোগ ছিল না। তবে স্থানীয় একজনের কাছ থেকে কিছুদিন তালিম নিয়েছি।’

কেন এতটা আলোচিত ‘অপরাধী’

গানটিতে ভেঙে যাওয়া প্রেমের কথা স্মরণ করেছেন দুজনই। গানের ‘সরল কথা, সুর ও আকুতির জন্যই’ গানটি এতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কারণ ইউটিউবে ঈগল মিউজিক এবং টুম্পার অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা ভিডিওতে থাকা কমেন্টই জানাচ্ছে এ কথা। ঈগলের অ্যাকাউন্টে এক মাসের ব্যবধানে ৪০ হাজারেরও বেশি কমেন্ট পড়েছে। যেখানে সপ্তাহের ব্যবধানে টুম্পার অ্যাকাউন্টে পড়েছে আট সহস্রাধিক কমেন্ট।

মোহাম্মদ সুমন নামের এক ব্যক্তি কমেন্টে লেখেন, গানটা শুনে আমার কান্না এসে পড়েছে। এটা আমারই গান।

অপর এক ব্যক্তি লেখেন, গানটা শুনে মনে হয়েছে এটা আমার জন্যই বানানো হয়েছে। মনে হচ্ছে নিজের জীবনের কথাগুলো ফাঁস হয়ে গেছে।

জয়তি দত্ত নামের অপর একজন লেখেন, গানটা আমার এত ভালো লেগেছে বলার নয়। এই প্রথম কোন বাংলাদেশি গান আমার প্রিয়তম গানের মধ্যে একটা হলো।

পশ্চিমবঙ্গ থেকেও অনেকে কমেন্ট করেছেন গানটিতে। চায়না কুণ্ডু নামের একজন লেখেন, আমি হাওড়ায় (পশ্চিমবঙ্গ) থাকি। আজ লোকনাথ পূজায় আমাদের পাড়ার মোড়ে মোড়ে এই গানটা শুধুই বেজে চলেছে।

শিমুল টিকাদার নামের এক ব্যক্তি লেখেন, ভালো লাগলো! আপনি ভারতেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।

গানের সঙ্গে সুর মেলানো, গানের কথা, সুর ও কণ্ঠের প্রশংসার বাইরে গিয়ে অনেকে মজার ও উপদেশমূলক কমেন্টেও এসেছে সেখানে। সীমা দত্ত নামের একজন লেখেন, স্কুল না পালিয়ে একটু পড়াশুনা করে টাকা উপার্জন করলে মেয়েটা আজ আপনারই থাকতো। আরেকটা মেয়ের জন্য নিজের জীবন শেষ করার কোনো মানে হয় না। আগে নিজেকে ভালোবাসুন।