‘স্বামী বলেন, ইয়াবা খুব ভালো-এটা মেয়েরাও খায়’

বাংলাদেশের ভয়াবহ ও ক্রমবর্ধমান মাদকের সমস্যার সবচেয়ে বড় কারণ ইয়াবা বিস্তার। সহজলভ্যতার কারণে নারী পুরুষ এই মাদকে আসক্ত হওয়া শুরু করে ২০০০ সালের পর থেকেই। স্নায়ুবিক উত্তেজনার এই মাদকের পরিণত কতটা ভয়াবহ, সম্প্রতি তা উঠে এসেছে ইয়াবাসক্ত এক নারীর বয়ানের মাধ্যমে।

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে ওই নারী জানান, ‘সরকারি চাকরিজীবী দ্বিতীয় স্বামীর মাধ্যমে এ সর্বনাশা নেশায় আসক্ত হন তিনি। এই নেশার ফলে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার পুরোটাই হারিয়েছেন তিনি।’

তিনি বলেন, ‘আমার দ্বিতীয় স্বামীর মাধ্যমে ইয়াবার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি আমাকে অনেক ভালোবাসতেন। একদিন তিনি বাড়িতে অনেকগুলো ইয়াবা নিয়ে আসেন।’

এ সময় ওই নারী যখন স্বামীর কাছে জানতে চান ট্যাবলেটের মতো দেখতে এগুলো কী, তখন তিনি ‘এটা খুব ভালো জিনিস’ বলে উৎসাহ দেন তাকে।

‘আমার স্বামী আমাকে বলেন, এখন এটা সবাই খায়, মেয়েরাও খায়। আর তুমি তো আমার স্ত্রী। সুতরাং তুমিও আমার সঙ্গে খাবে। আমি মনে করলাম, ‘যদি তার সঙ্গে বসে না খাই তাহলে হয়তো সে বাইরের মেয়েদের নিয়ে খাওয়া শুরু করবে। তখন আমি তার সঙ্গে খাওয়া শুরু করি,’ জানান তিনি।

কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই এই মাদকের ভয়াবহ প্রকোপ পড়তে শুরু করে তার শরীরে।

‘তিন মাস পর আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। এত শুকিয়ে যাই যে, আমাকে ৮০ বছরের বৃদ্ধার মতো দেখাতো। শরীর পুরোটা কালো হয়ে গিয়েছিল। আমার শরীরে অর্ধেক কাপড় থাকতো, অর্ধেক থাকতো না। আমি সারাক্ষণ মাথা আঁচড়াতাম। মনে হতো মাথায় শুধু উকুন। যে-ই দেখতো সে-ই আমাকে পাগল মনে করতো।’

ইয়াবার প্রভাবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করেন বলে জানান তিনি।

‘মা যখন আসতো তখন আমি তার সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করতে শুরু করি। আমি চোখে অনেক কিছু দেখতে থাকি। মুরগির মাংস দেখলে মনে হতো তার ভেতরে অনেক কেঁচো। মাথার চামড়াকে মনে হতো লাল রক্ত। মনে হতো মাথা থেকে রক্ত পড়ছে। খেতেও পারতাম না। কিছু মুখে দিলে সেটা রাবারের মতো শক্ত লাগতো।’

এতকিছুর পরও মায়ের সেবাতেই সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

‘তখন আমি খুব অসুস্থ। আমার মা একদিন ভাত মেখে আমাকে খাওয়াতে যাবেন, তখন আমার মনে হলো আমাকে তিনি কেঁচো খাওয়াচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর আমি বমি করতে শুরু করি। তখন তারা আমাকে আমার মায়ের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। স্বামীকে না জানিয়েই চিকিৎসা চলতে থাকে,’ বলেন তিনি।

কিন্তু সুস্থ হওয়ার পরও ইয়াবার ভয়াল থাবা তার পিছু ছাড়েনি। কারণ সেই নারীর স্বামী ততদিনে পুরোদস্তুর ইয়াবাসক্ত। মায়ের বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি ফিরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফের এই নেশার খপ্পড়ে পড়ে যান তিনি।

সূত্র : বিবিসি বাংলা