আজ আমরা উন্নয়নশীল বাংলাদেশে এসেছি। আমাদের খ্যাতি সারা বিশ্বে। ইন্টারনেটের সুবাধে গবেষণা, জ্ঞানচর্চা, কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা, সামাজিক যোগাযোগ সকল শাখায় আমরা উন্নয়ন ঘটিয়েছি। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে গ্যালাক্রির সূচনার যুগে প্রবেশ করেছি।
এত কিছুর পরও আমাদের শহরগুলো রাস্তা- ঘাট, ময়লা-আর্বজনায় পরিপূর্ণ অথচ আমরা ময়লা- আর্বজনাকে চিনি না কিংবা জানবার চেষ্টও করি না। আবার অনেকে মুখে রুমাল দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে চলে যাই। কিন্তু এই ময়লা- আর্বজনাতে কি আছে? শহরের এক ট্রাক বা ৫ টণ ময়লাতে আছে- মাটি, ধুলা-বালি, ইটের টুকরা আছে- এক থেকে দুই টন; পানি আছে -এক থেকে দেড় টন; পচনশীল জৈব আর্বজনা আছে এক থেকে দেড় টন; পলিথিন বা প্লাস্টিক আছে- ১০০ থেকে ৫০০ কেজি; রাবার আছে- ১০ থেকে ৫০ কেজি; হার্ড প্লাস্টিক বা ফোম জাতীয় আর্বজনা আছে-১০ থেকে ৫০ কেজি; প্যাট যেমন-বডির খোসা, পানির বোতল, বিভিন্ন কভার যা আগুনে পুড়ে না আছে – ১০ থেকে ৫০ কেজি; কাচ, লোহা, হাড় ও অন্যান্য আছে- ১০ থেকে ১০০ কেজি।
এগুলো হল আমাদের বাংলাদেশের ময়লা-আর্বজনা। অনেক উন্নত রাষ্ট্র যেমন- জাপান, ইংল্যান্ড তারা পলিথিন বা প্লাস্টিক জাতীয় আর্বজনাকে একটা নির্দিষ্ট ঝুড়িতে জমা করে পাইরোলাইসিস প্লান্টের মাধ্যমে পেট্রোল, ডিজেল ও কেরোসিন তৈরি করে যা খনিজ পেট্রোল, ডিজেল ও কেরোসিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে। উল্লেখ্য, জাপানের সব পাইরোলাইসিস প্লান্ট এস.এস বা স্টিলের যার দাম প্রায় কয়েক কোটি টাকা। আবার চিনের লোহার পাইরোলাইসিস প্লান্টের দাম প্রায় কোটি টাকা।
এখন দেখা যাক, পচনশীল জৈব আর্বজনা যার মূল উপাদান সেলুলোজ, সুক্রোজ ও ফ্রুক্টোজ যা ইস্টের ( কনসটেন্ট সালফিউরিক এসিড প্রয়োজন অনুযায়ী) সাহায্যে গাজঁন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাজঁন ঘটিয়ে রিফ্লাক্স ডেসটিলেশনের মাধ্যমে ইথানল উৎপাদন করা হয়। আর অবশিষ্ট মেস গৃহপালিত পশুর খাবার হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এ কাজে সবার অগ্রদূত ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র। ব্রাজিল পেট্রোলের সাথে ২৫% ইথানল ব্যবহার করছে আবার যুক্তরাষ্ট্র ১৫% ইথানল পেট্রোলের সাথে ব্যবহার করছে। এরকম ১০ টণের একটি রিফ্লাক্স ডেসটিলেশন প্লান্টের খরচ হবে প্রায় কোটি টাকা। এখানে বলে রাখা ভালো গাজঁন তৈরির উপকরণ ও রাখার কনটেননার ছাড়া রিফ্লাক্স ডেসটিলেশন আর পাইরোলাইসিস প্লান্ট প্রায় একই যন্ত্র অর্থ্যাৎ পাইরোলাইসিস প্লান্টেও ইথানল উৎপাদন করা সম্ভব।
রাবার বা টায়্যার পাইরোলাইসিস প্লান্ট যা দিয়ে কর্ড অয়েল (কালো জ্বালানি তৈল) ও কার্বন ব্লাক তৈরি করা হয়। এরকম পাইরোলাইসিস প্লান্ট বাংলাদেশে আছে ২০ থেকে ২৫ টি আর সবগুলো লোহার এবং চীনের তৈরি যার মূল্য প্রায় কোটি টাকা। যান্ত্রিক ও প্রক্রিয়াজাত করনের অনেক সমস্যা থাকার পরও এই প্রতিষ্ঠাগুলো কোন রকম টিকে আছে। অনেক প্রতিষ্ঠান কনটিনিউয়াস উল্লেখ থাকলেও বেশিভাগ একদিন পর পর প্রোডাকশন দেয়। উন্নত রাষ্ট্রগুলো রাবারের কর্ড অয়েল থেকে সিনথেটিক রাবার তৈরি করছে, আমরাও সিনথেটিক রাবার তৈরি করতে পারি। রাবারের কার্বন ব্লাক দিয়ে ফটোস্টাট মেশিনের কালি ও প্রিন্টারের কালিও তৈরি করছে জাপান, চিন ও পার্শ্ববতী দেশ ভারত আমরাও এগুলো তৈরি করতে পারি।
হার্ড প্লাস্টিক বা পিএস ফোম পাইরোলাইসিস প্লান্টের মাধ্যমে যে কর্ড অয়েল পাওয়া যায় তাতে প্রচুর পরিমাণে জাইলিন আছে, এক লিটার জাইলিনের খুচরা মূল্য ১০০০ টাকা। ১ কেজি হার্ড প্লাস্টিকে ৭৫% কর্ড অয়েল আছে। এই তেলে কিছু গন্ধ থাকলেও টনসিল ব্লিচিং আর্থ বা ধোপের সাহায্যে এই গন্ধ দূর করা যায়। জাইলিন রং শিল্পে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেমিক্যাল যা সম্পূর্র্ণ বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।
পেট জাতীয় আর্বজনাকে পাইরোলাইসিস প্লান্টের মাধ্যমে গলিয়ে শহওে ময়লা ফেলার/রাখার ঝুড়ি/বিন সহজেই তৈরি করা যায়।
আধুনিক কনটিনিউয়াস পাইরোলাইসিস প্লান্টের নকশা অনুযায়ী কারখানা স্থাপন করতে অর্থ লাগে মাত্র বিশ লক্ষ টাকা এবং সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যেই প্রোডাকশনে যাওয়া সম্ভব।
কাচামাল: ময়লা- আর্বজনা
উৎপাদন : দৈনিক পেট্রোল ৫০০ থেকে ১০০০ কেজি; ডিজেল ১ থেকে ২ টন; কেরোসিন ১ থেকে ২ টন; ইথানল ১ থেকে ২ টন। আর সাপ্তাহিক রাবার কর্ড অয়েল ২ থেকে ৩ টন; জাইলিন ২ থেকে ৩ টন; কার্বন ব্লাক ২০০ থেকে ৫০০ কেজি
উপকারিতা: কোন ধোয়া উৎপন্ন হবে না অর্থ্যাৎ ধোয়াকে পুনরায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। হাইড্রোলিক সিলিন্ডারের মাধ্যমে কাচামাল লোড তাই শারীরিক শ্রম নেই । কার্বন ব্লাক সম্পূর্ন হাতে স্পর্শ ছাড়াই ডিসচার্জ ও আরও অন্যান্য নতুন আধুনিক সুবিধা। গৃহপালিত পশুর খাদ্য উৎপাদন দৈনিক ৩ থেকে ৪ টন। কাগজ কলের পলিথিন/ কভারপেজকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার যেখানে ৬৫% গ্যাস, ১৫% তৈল ও ২০% কার্বন ব্লাক আছে।
অর্থ্যাৎ সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যেই এই ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব। এমনকি সাত-আট মাসের মধ্যেই সারা বাংলাদেশের শহর ও রাস্তা-ঘাটগুলো থাকবে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন। এছাড়াও পরবর্তীতে অন্যান্য দেশেও এই ধরনের পাইরোলাইসিস প্লান্টসহ লোকবল রপ্তানি করা সম্ভব।