রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদে ভিক্ষা করছেন রমজান আলী (৪৪)। তিনি পঙ্গু। রাস্তায় শুয়ে ভিক্ষা করেন। রমজান ডেমরায় থাকেন। সেখানে তাঁর একটি মুদি দোকান আছে। কথাবার্তার এক ফাঁকে জানালেন, ব্যাংকে তাঁর লাখ দশেক টাকা আছে!
ভিক্ষার ফাঁকেই এই প্রতিবেদককে রমজান বলেন, ‘আমার কোনো অভাব নেই। আমি বালাই আয় করি।’ তিনি বলেন, ‘ভিক্ষার টাকা দিয়া সব করসি জীবনে।’
পুরো রমজান মাসেই ভিক্ষা করেন তিনি। কখনো বাসে, কখনো রাস্তায় শুয়ে। আর বছরের ৫২ শুক্রবার বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে দেখা মেলে রমজানের। সামনে কাগজ বিছিয়ে শুয়ে থাকেন তিনি। রমজানের এক ছেলে গুলিস্তানের একটি মার্কেটে কাজ করেন। দুই মেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে। একজন চতুর্থ শ্রেণিতে, অন্যজন অষ্টম শ্রেণিতে। অন্যজনের বয়স দুই বছর।
রমজানের এক পা ট্রেনে কাটা পড়েছিল ২০ বছর আগে। রমজান আলী নিজের মুখেই বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকে আমার লাখ দশেক টাকা আছে!’
আজ শুক্রবার বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজের আগে প্রায় ত্রিশ মিনিট সঙ্গে কথা হয় রমজান আলীর। তবে এক পর্যায়ে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি আর কথা বলতে চাননি।
তবে এর আগে নিজের সম্পর্কে ভালো তথ্যই দেন রমজান আলী। তিনি বলেন, ‘আমার কোন অভাব নেই। চার ছেলে মেয়ে আছে। একজন আয় করে ভালাই। আমিও বালাই আয় করি। মুদি দোকান আছে ডেমরাতে। একটা রোজা থেকে শেষ রোজা পর্যন্ত ঢাকায় ভিক্ষা করি। আর সব জুম্মার দিন এইহানে আসি। বিটি( বউ) দোকান চালায়।’
অভাব নেই কিন্তু ভিক্ষা করেন কেন- এমন প্রশ্নে রমজান বলেন, ‘অনেকেই করে তাই করি। ১৫ বছর ধরে ভিক্ষা করি। ভিক্ষার টাকা দিয়া সব করসি জীবনে। দোকানে তিন লাখ টাকার মাল আছে। এসবও ভিক্ষার টাকায়। ফাও ফাও টাকা ইনকাম করি। ব্যাংকেও দশ লাখ টাকা আছে।’
রমজান আলী ইমদাদ হোসেন নামের এক বৃদ্ধকে দেখিয়ে বলেন, ‘উনার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ এ তার দুই তলা বাড়ি আছে।’
বায়তুল মোকাররমের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের গেটে গিয়ে দেখা যায়, দুই পাশে সারি বেঁধে বসে আছে ভিক্ষুক। মুসল্লিরা নামাজে যাচ্ছেন। নামাজ শেষ হলেই ভিক্ষুকরা ভিক্ষা চাইছেন। এদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
ইমদাদ হোসেনের কাছে গেলে তিনি জানান তাঁর বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। তিনি প্রতিদিন ভিক্ষা করেন না। শুধু শুক্রবার বায়তুল মোকাররম আসেন। দুইতলা বাড়ির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাড়ি আছে তবে আমার না। আমার ছেলের। ছেলে ব্যবসা করে সে বানাইছে। তবে তুমি জানলা ক্যামনে বাবা? আজ ৬০০ টাকা কামাইছি। কিন্তু অনেকেই হাজারের বেশি কামাইছে।’
আবদুল হাই নামের একজন ভিক্ষুক বলেন, ‘এখানে অনেকেই আসে যাদের টাকা টুকার হেশ (শেষ) নেই। ব্যবসা বাবা, এসব ব্যবসা। ওদের জন্য আমরা টাকা পাইনি। এখানে অনেকেই বড় লোক আছে। নাজির নামের একজন আসে হের (যার) শনির আখড়ায় বাড়ি আছে তিন তালা (তলা)। তয় হেয় আজ আসে নাই।’
রমজান মাসের প্রথম শুক্রবার বায়তুল মোকাররমের সামনেই রাজীব আলী নামের একজনের সাথে কথা হয়। তিনি বলেছিলেন, ‘ শুধু এহানে না। ঢাকায় ভিক্ষা করে এমন অনেকেই অনেক টাহার মালিক। এই যে রমজান শুরু হইছে; হাজার হাজার লোক গ্রাম থেকে আইবো। হাত পাতবো।’