মাদকবিরোধী অভিযানে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হককে হত্যার ঘটনাটি ‘ভুল’ হিসেবে দেখছেন ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযানে দুই একটা ভুল হতেই পারে।’
গত ২৬ মে কক্সবাবারের মেরিনড্রাইভ সড়কে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এই জনপ্রতিনিধির মৃত্যুর পর শুরু হয়েছে বিতর্ক। ২০০৪ সাল থেকে চলা ক্রসফায়ার আর বন্দুকযুদ্ধের বর্ণনা কখনও বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। কিন্তু কথিত বন্দুকযুদ্ধের আগে আগে একরামুলের মোবাইল ফোনে স্ত্রী আয়েশা আক্তারের কল করা এবং গোটা ঘটনাটির অডিও রেকর্ড প্রকাশ হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে কথা এতদিন বলে আসছে, তার সত্যতা নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠেছে।
এই অডিও রেকর্ড প্রকাশ করে স্ত্রী বলেছেন, একরাম কোনো বন্দুকযুদ্ধে নিহত হননি, তাকে একতরফা গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
১ জুলাই অডিও রেকর্ডটি ভাইরাল হওয়ার পর তুমুল সমালোচনা চলছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘তদন্ত হবে’। ‘খতিয়ে দেখা হচ্ছে’ বলেছে র্যাব।
পরদিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নারীদের জন্য বাস ‘দোলনচাপাঁ’র উদ্বোধন শেষে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
একরামুলের মৃত্যু চলমান মাদকবিরোধী অভিযানকে প্রশ্নের মুখোমুখি করল কি না-এমন প্রশ্নে মন্ত্রিসভার এই সদস্য বলেন, ‘মোটেও না। এ ধরণের অভিযানে দুই একটা ভুল হতেই পারে।’
পরক্ষণের কাদের বলেন, ‘আমি জানি না, খতিয়ে দেখার আগে। এটা কোন নিরীহকে শিকার করা হলো কি না? বিষয়টা তদন্তের পরে বের হয়ে আসবে। তদন্তের আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না।’
গত ৪ মে থেকে শুরু হওয়া চলমান অভিযানে ১২০ জনেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে যার প্রায় প্রতিটির বর্ণনাই একরামের মৃত্যুর মতোই দিয়েছে র্যাব ও পুলিশ। কোথাও তারা বলেছে সন্দেহভাজনদেরকে ধরতে গেলে তারা বা সহযোগীরা গুলি করেছে, অথবা সন্দেহভাজনদেরকে নিয়ে বের হলে সহযোগীরা গুলি করেছে। পাল্টা গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন সন্দেহভাজনরা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সড়ক মন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিদের বক্তব্যও একই রকম।
কাদের বলেন, ‘একরামুল আমাদের পার্টির একজন কর্মী, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটা বক্তব্য দিয়েছেন। এরপর আমার মনে হয় কিছু বলা উচিত নয়।’
‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন এ অভিযানে যদি কোন নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হয়, তাহলে অবশ্যই এ ব্যাপারে তদন্ত করে…। যারা এ অভিযানের সঙ্গে জড়িত তাদেরকেও এখানে রেহাই দেয়া হবে, তা মনে করার কোন কারণ নেই।’
‘আমি নিজেও একটা অনুষ্ঠানে বলেছি কোন নিরীহ মানুষ, যে মাদকের সঙ্গে জড়িত নয়, তাকে লিস্টেড করে, তার সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ… এ বিষয়টা তো আমরা আগেভাগেই পরিষ্কার করে বলেছি।’
একরামের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্ট কোনো অভিযোগ ছিল না। ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একটি মামলা হলেও সেটি মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। কক্সবাজারের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সে সময় তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে।
আর একরাম যে তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন সেটাও বুঝা গেছে তার মৃত্যুর পর এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়ায়। তারা তাকে পরপর তিনটি নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছেন। আর জানাযায় শরিক হয়েছেন হাজারে হাজার।
এমনটিও শোনা যাচ্ছে, এক সময় টেকনাফের আলোচিত সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির সঙ্গে এরকামুলের বিরোধ তৈরি হয়েছিল। বদির বিরুদ্ধে তিনি প্রায়ই কথা বলতেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও বলছেন, একরামুলকে ফাঁসানো হয়েছে। এটা দলের ভেতর থেকেও হতে পারে।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখানে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের আলামত আমরা পাইনি। যেটা হয়েছে সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখানে কি সে ভিকটিম হয়ে গেল? তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কোন নিরীহ ব্যক্তি হামলার শিকার হয় তাতে সরকার কোন প্রকারের ছাড় দেবে না।’
এই ঘটনাটি সাধারণের মধ্যে কোনো আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘এখানে আতঙ্ক হবে কেন? আমরা সত্যের পথে আছি। অন্যায় হলে তার বিচার হবে।’
মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে সড়ক মন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের একটা বড় কাজে যা দেশের সর্বস্তরে প্রশংসা কুড়িয়েছে। এখন একটি মতলবি মহল এর বিরোধিতা করছে স্রেফ রাজনৈতিক কারণে।’
‘রাজনৈতিক বিরোধিতার খাতিরেই বিরোধিতা হচ্ছে। সরকারের প্রতিপক্ষরাই বিরোধিতা করছে। কিন্তু যাদের জন্য অভিযান তারই খুবই খুশি।’
‘সুনামির মত মাদক দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। সেই অবস্থায় শুধুমাত্র মৌখিক প্রচারণায় মাদকের স্রোত থামানো যাচ্ছে না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এ দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ কিন্তু মাদকবিরোধী অভিযান, এর বিরুদ্ধে সামাজিক জনমত গড়ে তোলার কথা আর কেউ বলেছেন কি না।’
কাদের বলেন, ‘আজকে যারা সমালোচনা করে এ অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান, তারা কিন্তু মাদক নিয়ে একটা কথাও উচ্চারণ করেন নাই।’
‘রাজনীতি ছাড়া এ দেশে আমাদের আর কিছু বলার নাই? তরুণ সমাজ মাদকের জন্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে আমরা কি কিছুই বলব না?’
অভিযানের সমালোচনাকারীদের সমালোচনা করে কাদের বলেন, ‘এটা কোন রাজনীতি? যে রাজনীতি শুধু প্রতিপক্ষকে গালিগালাজ করে, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায়। অথচ সমাজে যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে পডছে, বাতাস, পানি দুষিত হচ্ছে এর বিরুদ্ধে বলে না!’
দোলন চাঁপা যে রুটে চলবে
অনুষ্ঠানে উদ্বোধন হওয়া দোলনচাঁপা বাস নিয়ে এসেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান র্যাংগস গ্রুপ।
বাসটি রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বর থেকে ফার্মগেট, শাহবাগ, গুলিস্তান হয়ে মতিঝিল যাবে।
দোলনচাঁপা বাসটিতে প্রাথমিক চিকিৎসা, সিসিটিভিসহ নিরাপদ ও আরামদায়ক ব্যবস্থা রয়েছে। ভারতীয় ভলভো আইশার ভেহিকল লিমিটেডের বাসটিতে মিরপুর ১২ থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৩০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে আরও আটটি বাস সার্ভিস চালু করা হবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন র্যাংগস গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুর রউফ চৌধুরী, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, র্যাংগস মোটরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহান রউফ চৌধুরী প্রমুখ।