পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় পুলিশ ও মুসল্লিদের সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এঘটনায় পুলিশসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। সংঘর্ষের পর জেলা শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার জুমার নামাজের পর পঞ্চগড় শহরের শের-ই বাংলা পার্ক সংলগ্ন মহাসড়কে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। অন্যদিক থেকে মুসল্লিরাও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। সংঘর্ষে ৯ পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আরিফুর রহমান (২৮) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন।
নিহত আরিফুর রহমান পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি শহরের একটি প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবস্থাপক ছিলেন। সংঘর্ষের সময় তিনি নামাজ পড়ে বাড়িতে ফিরছিলেন বলে তাঁর স্বজনেরা দাবি করেছেন।
এক দিন আগে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) একই দাবিতে পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন মুসল্লিরা। প্রায় ৫ ঘণ্টা এই অবরোধ চলে। বিকাল ৩টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সফিকুল ইসলাম এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সমঝোতার আশ্বাস দেন। পরে মুসল্লিরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।
শুক্রবার সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিপুল সংখ্যক বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
মুসল্লি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুমার নামাজ শেষে বিভিন্ন মসজিদ থেকে মুসল্লিরা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে সমবেত হন। পরে তারা মিছিল বের করেন। শের-ই বাংলা পার্ক সংলগ্ন মহাসড়কে মিছিল থেকে ইটপাটকেল ছোড়া হলে পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশ ও মুসল্লিদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।
মুসল্লিদের দাবি, আহমদিয়া মুসলিম জামাত তথা কাদিয়ানীরা আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে অস্বীকার করে এবং অন্য কাউকে নবী মেনে নিজেকে মুসলিম দাবি করতে পারে না। তারা গোলাম আহমদকে নবী মনে করে, তারা কাফের। ইসলামের নামে তাদের কোনো জালসা আয়োজন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মেনে নিতে পারে না। কাজেই তাদের জালসা বন্ধ ঘোষণা করতে হবে।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব এবং বিজিবি তৎপর রয়েছে। কোনো প্রাণহানি যেন না ঘটে সেদিকেও সোচ্চার রয়েছে প্রশাসনের সর্বমহল।
ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা ১৭ প্লাটুন বিজিবির মধ্যে রয়েছে বিজিবির রংপুর রিজিয়নের তত্ত্বাবধানে পঞ্চগড় ব্যাটালিয়ন থেকে ৫ প্লাটুন, ঠাকুরগাঁও ব্যাটালিয়ন থেকে ২ প্লাটুন, নীলফামারী ব্যাটালিয়ন থেকে ২ প্লাটুন, রংপুর রিজিয়ন থেকে ১ প্লাটুন, রংপুর সেক্টর থেকে ৩ প্লাটুন, দিনাজপুর সেক্টর থেকে ৩ প্লাটুন ও ঠাকুরগাঁও সেক্টর থেকে ১ প্লাটুন।