কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে খুনের ঘটনা লেগেই রয়েছে। গত তিন মাসে ১৫ খুনের ঘটনায় ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে সর্বশেষ গত সপ্তাহে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আনোয়ার, মৌলভী ইউনুস ও সৈয়দ হোছেন নামে তিনজনকে পর পর দুদিনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তন্মধ্যে আনোয়ার ও মৌলভী ইউনুস রোহিঙ্গা নেতা। এই হত্যাকাণ্ডের পর নড়েচড়ে বসেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সূত্রমতে, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই বেড়েছে খুন, মারামারি, চোরাচালান, মাদক ব্যবসাসহ হরেকরকম অপরাধ। এ নিয়ে ওখানকার বাসিন্দাদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরাই এসব হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
উখিয়ার কুতুপালং এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিন জানান, বর্তমান ক্যাম্পের পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। প্রতিদিন ঘটছে খুনের ঘটনা। পাশাপাশি দলবদ্ধভাবে খুনের ঘটনা সন্ত্রাসীরা ঘটিয়ে থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে উল্লেখযোগ্য গ্রেফতার হচ্ছে না। যে কারণে প্রতিনিয়িত অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলছে।
স্থানীয় সূত্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেওয়া তথ্যমতে, গেল তিন মাসে কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুন হয়েছেন ১৫ রোহিঙ্গা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা (মাঝি) রয়েছেন। আর ৫ বছরে খুন হয়েছে ১১৫ জন। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে দেড় হাজারেও বেশি।
সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসা, চোরাচালানসহ নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। যদি দ্রুততার সঙ্গে সরকার রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত না পাঠায় অথবা অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয় তা হলে পুরো দুই উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে।
রোহিঙ্গা নেতারা জানান, ক্যাম্পের মধ্যে সারারাত সক্রিয় থাকে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের ভারি অস্ত্রের ভয়ে অনেকেই প্রতিবাদ করার সাহস পান না। তবে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসীদের মিয়ানমার সরকার গোপনে মদত দিচ্ছে বলেও অভিযোগ অনেক রোহিঙ্গার।
এদিকে কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আয়াছুর রহমান জানান, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে ক্যাম্পে একের পর এক খুনের ঘটনা জন্ম দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের মাঝে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় তা ম্লান করতেই ক্যাম্পে নতুন করে নাশকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের এই নেতা আশঙ্কা করেন, ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
সাধারণ রোহিঙ্গাদের মতে, ক্যাম্পে এপিবিএনের উদ্যোগে পাড়ায় ও পাহাড়ে স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে পাহারা বসিয়েও আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না তারা। কারণ তারা পাহারায় থাকার পরও হত্যাকাণ্ড প্রতিহত হচ্ছে না। ক্যাম্পে পাহাড়কেন্দ্রিক সক্রিয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।
তবে এপিবিএন পুলিশের দাবি, সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের তিনটি ইউনিট। সন্ত্রাসীদের ছাড় দেওয়া হবে না। ক্যাম্পে বাড়তি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে দাবি এপিবিএনের।
৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের কারণে কিছু দুষ্কৃতকারীরা জিরো লাইন থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে নাশকতা সৃষ্টি করছে। তারা বিশেষ করে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে মাঝিদের টার্গেট করে হত্যা করছে। এ বিষয়ে এপিবিএন তদন্ত করে কাজ করছে।