যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমান জেনারেশনের কাছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। ভিন্নধর্মী গল্প এবং উপস্থাপন শৈলীর জন্য এই প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তার প্রথম থেকেই আকাশচুম্বী। অন্যদিকে নির্মাতারা দর্শকদের জন্য নতুন কিছু নিয়েই আসছেন। তবে যদি শুরুর কথা বলি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সাধ আমরা প্রথম পেয়েছি ‘হইচই’ থেকে। বলা যায় কলকাতা থেকে।
‘দুপুর ঠাকুরপো’, ‘হোলি ফাক’, ‘দেবালয়’, ‘চরিত্রহীন’- এর মতো ওয়েব সিরিজগুলো আমাদের দর্শকদের টেনেছে। এক দিকে যেমন ‘হইচই’-এর নতুনত্ব অন্যদিকে প্রেম-বিছানা-আদর-কমেডি ভরা গল্প আকৃষ্ট করে। অভিনবত্ব তৈরি করতে গিয়ে খোলামেলা দৃশ্যের প্রতি ভারতীয় বাংলার অধিকাংশ পরিচালক কাজ করে গিয়েছে। যার ফলে গল্পের একঘেয়ামিতা ধীরে ধীরে দর্শকদের সমনে প্রস্ফুটিত হতে থাকে। যার ফলে ট্রাম-বাসের গুঞ্জন থেকে ঢাকাইয়া জ্যামে দর্শদের চোখ আটকে যায়।
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের ‘তকদীর’, ‘ঢাকা মেট্রো’, ‘লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলমেন’, ‘কাইজার’, ‘কারাগার,’ অথবা পুনর্জন্ম ইত্যাদি বশে আলোড়ন তুলেছে। যেখানে গত বছর জুড়েও ‘হইচই’-এর ‘একেনবাবু’ বা ‘ব্যোমকেশ’ ছিলো দর্শকদের চাহিদার শীর্ষে। সেসকল উড়িয়ে এখন চর্চিত হচ্ছে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী, সৈয়দ আহমেদ শাওকীর মতো ব্যক্তিত্ব।
অনেক সিনেমা বোদ্ধরা মনে করছেন আমাদের দেশীয় সিরিজের পরিচালকরা এক ভিন্ন দৃষ্টিকোণ তৈরি করতে সমর্থ হয়েছেন। বিষয়গত অভিনবত্ব না-থাকলেও দেখা ও দেখানোর প্রচেষ্টায় এমন কিছু রয়েছে, যা ওপাড় বাংলার সিরিজে পাওয়া যাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত আমাদের সিজিরে ভেতর ওপার বাংলার গায়ে ঘেঁষা বা ন্যাকামি চেয়ে সিনেম্যাটিক বেশি। তার বড় উদাহারণ, ‘তকদীর’ বা ‘কারাগার’।
বড় পর্দার গল্পকে আমাদের দেশীয় নির্মাতারা ছোট পর্দায় অনায়াসে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে অনেক গল্পকে বিতর্কিতভাবে ওপাড় বাংলার নির্মাতারা পর্দায় এনেছে। এর ভেতর একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ ১৯১৭ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘চরিত্রহীন’। সময়ের থেকে কয়েক কদম এগিয়ে থাকা এই উপন্যাসটিকে সেই সময় মেনে নিতে পারেননি রক্ষণশীল সমাজের অনেকেই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উপন্যাসটি কালজয়ী হয়। এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে গিয়ে গল্পটিকে এবার পর্দা উপস্থাপন করা হয়েছে অতিমাত্রায় রঞ্জিত করে। যা এখনো রক্ষণশীল সমাজ গ্রহণ করতে পারেনি। ওপার বাংলার পরিচালকরা বিতর্ক দিয়ে দর্শদের মন জয় করার চেষ্টা করছে প্রতিনিয়তো।
অন্যদিকে আমাদের দেশীও লেখকদের চিত্রনাট্য লেখার মুন্সিয়ানা প্রকাশ পায় প্রতিটি গল্পে। এক পর্ব থেকে অন্য পর্বের দিকে যাওয়ার সময়ে এমন এক বা একাধিক কৌশল ব্যবহার করা হয় যা ভাবনার ফসল। পর্ব থেকে পর্বান্তরে যাওয়ার সময় ‘মোচড়’ যে কোনো ধারাবাহিকেরই অন্যতম প্রধান উপাদান। বাংলা সিরিজ এই উপকরণটি নিয়ে প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কিন্তু কখনোই এগুলোকে ‘আরোপিত’ বলে মনে হয় না। ওপার বাংলার সিরিজে অনেক সময় এমন কিছু করা হয়, যা দেখেলে যে কেউই বুঝতে পারবে ‘অবাস্তব’। এছাড়াও অভিনয়। সিনেমার অভিনয়রীতি অনুসরণ করছে আমাদের অভিনেতারা।