চার বছরেও জ্ঞান ফেরেনি বশেমুরবিপ্রবির সেই ছাত্রীর

নিজ সন্তানের মুখে ‘মা’ ডাক শোনার অপেক্ষায় একজন মায়ের। অনেকদিন হয়ে গেল, এই ‘মা’ ডাক শুনতে পায়নি তিনি। নিজে রোগাক্রান্ত হয়েও সারাদিন অসুস্থ মেয়ের বিছানার পাশে পড়ে থাকেন সেই মা। এই বুঝি ‘মা’ বলে ডেকবে তার আদরের মেয়েটি। কিন্তু সে ডাক আর শোনা হয় না। গত চার বছর ধরে এভাবেই অপেক্ষা করছেন মরিয়ম সুলতানা মুন্নির মা হাজেরা বেগম।
চিকিৎসক ও নার্সদের ভুল চিকিৎসায় গত চার বছর ধরে অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন হাজেরা বেগমের আদরের মেয়ে মুন্নি। মুন্নি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।

আর কজন শিক্ষার্থীর মতো মেধাবী এই ছাত্রী বুকভরা আশা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। অথচ আজ গোপালগঞ্জ শহরের বিসিক ব্রিজ এলাকায় ভাড়া বাসায় অজ্ঞান অবস্থায় নিথর হয়ে পড়ে আছেন। সারাদিন বিছানায় কাটে তার সময়।

মুন্নির ভাই মো. রুবেল বিশ্বাস বলেন, বোনের চিকিৎসায় ইরই মধ্যে ৫০ লাখ টাকার উপরে খরচ হয়ে গেছে। খুলনার আবু নাসের হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল ও শমরিতা হাসপাতালে তিন মাস ধরে চিকিৎসা করানো হয়েছে। তবে ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। তাই স্থানীয় এক ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এখন বাসাতেই মুন্নির চিকিৎসা চলছে।

এদিকে বর্তমানে আগের থেকে কিছুটা অবস্থা ভালো বলে তিনি জানান। স্বপ্ন দেখেন নিজের সুস্থ বোনের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের। তিনি জানান, আগে প্রায় কঙ্কালসার হয়ে গেলেও বর্তমানে শরীরের অবস্থা খানিকটা ভালো হয়েছে। তাছাড়া আগে নড়াচড়া না করতে পারলেও বর্তমানে নড়াচড়া করতে পারছে। এখন আগ্রহভরে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কথা বলতে পারছে না।

এ ঘটনায় তৎকালীন সময়ে মুন্নির চাচা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের জাকির হোসেন বিশ্বাস বাদী হয়ে গোপালগঞ্জের জেনারেল হাসপাতালের ডা. তপন, নার্স শাহনাজ ও কোহেলীকাকে আসামি করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু চার্জশিট থেকে মামলার প্রধান আসামি ডা. তপন কুমার মণ্ডলের নাম বাদ দেয় পুলিশ। পরবর্তীতে দুই নাসর্কে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে তারা। আসামিরা সবাই বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।

মামলায় প্রধান আসামির নাম বাদ দেওয়ায় মুন্নির বাবা মো. মোশারফ হোসেন বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ কারো সঙ্গে কথা না বলে তদন্ত ছাড়াই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে আমার মেয়ের জীবনটা বিপর্যয়ের সম্মুখে রয়েছে।

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসিরুদ্দিন বলেন, আমি দুমাস হলো এই থানায় এসেছি। এদিকে মামলার দায়িত্ব থাকা পরিদর্শক (এসআই) মুকুলও এখন বদলি হয়ে চলে গেছেন। চার বছর পরে এসব মামলা আর বহাল না থাকারই কথা।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০ মে পিত্তথলি জনিত সমস্যার গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান মুন্নি। পরদিন ২১ মে সকাল ১০টায় অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন ভোরে কর্তব্যরত নার্স ভুল ইনজেকশন দেয়ায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মুন্নি। সে সময়ে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন জানায়।