অনন্ত জলিলের অ্যাকাউন্টে ৫-১০ হাজার টাকাও থাকে না!

দেশের একজন স্বনামধন্য ধনাঢ্য ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল। গার্মেন্টসের ব্যবসা করেন তিনি। প্রতি বছর সেরা করদাতাদের তালিকায় তার নাম উপরের দিকেই থাকে। এছাড়া তিনি একজন চলচ্চিত্র প্রযোজক। এ বছর শতকোটি টাকা ব্যয়ে বানিয়েছেন সিনেমা ‘দিন-দ্য ডে’, যেটি গত ১০ জুলাই ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছে। সেই অনন্ত জলিলের অ্যাকাউন্টে নাকি ৫-১০ হাজার টাকাও সঞ্চয় থাকে না!

জি হ্যা, ঠিকই পড়ছেন। শনিবার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটা জানিয়েছেন অনন্ত জলিল নিজেই। তার কাছে প্রশ্ন ছিল, অনন্ত জলিল কত টাকার মালিক? জবাবে এই ব্যবসায়ী অভিনেতা হেসে দিয়ে বলেন, ‘আমার অ্যাকাউন্টে ৫-১০ হাজার টাকা আছে কী না আমি জানি না। কারণ, আমি কখনো সেভিংস করি না।’

অনন্ত জানান, ‘আমার সেক্রেটারি বনাম বডি গার্ড সাজ্জাদের কাছে একটা ক্রেডিট কার্ড সবসময়ই থাকে। সকাল বেলা ও টাকা উঠায় নিয়ে আসে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সেগুলো মানুষকে দিয়ে যাই। আবার ফ্যাক্টরিতে যখন যাই, অ্যাডমিন লিস্ট করে রাখে, সাইন করে দেই। অ্যাকাউন্টে যে টাকা থাকে ওদেরকে দেয়। আবার পরের দিন সকালে রুটিন ওটাই থাকে। আসলে পারসোনাল কোনো সেভিংস আমি কখনোই করি নাই।’

অভিনেতা বলেন, ‘যত টাকা ইনকাম করেছি আমরা ইন্ডাস্ট্রি বাড়িয়েছি। আমার ভাই ২০০ লোক নিয়ে আমাদের কোম্পানি শুরু করেছিলে। ২০০১ সালে আমি যখন বিজিনেসে আসি, তখন লোক ছিল ৪০০। আর এখন আমাদের কোম্পানিতে সাড়ে ১২ হাজার লোক কাজ করে। ৬৪ বিঘার উপরে ফ্যাক্টরি। শুধু ফ্যাক্টরিই না, আমাদের যে বৃদ্ধাশ্রম, সেটাও সাড়ে ২২ বিঘা। তারপর বিভিন্ন সংস্থা, স্কুল, মসজিদ তো আছেই। আমরা যেটুকু ইনকাম করি, সেটুকু মানুষের কল্যাণের কাজে লাগাই। কারণ, মরার পরে কারও ব্যাংক ব্যালেন্স সাথে যাবে না। এটুকু বিশ্বাস করি।’

অনন্ত বলেন, ‘আমার ফ্যামিলিও আমাকে বলে যে, আরিজ-আবরারের (দুই ছেলে) কথা চিন্তা করেও তো দুই একটা ডিপোজিট করা যায়। আমি একটাই কথা বলি, আমার বাবা তো আমাদের জন্য ডিপোজিট করেন নাই। আমার বাবা আমার প্রতি ইনভেস্ট করেছেন, আমাকে এডুকেটেড করেছেন। আমার জন্য বেস্ট চিন্তা করেছেন। ম্যানচেস্টারে পাঠিয়েছেন বিবিএ করতে। বাংলাদেশে পড়াশোনা করিয়েছেন। তারপর আমার উপরে ছেড়ে দিয়েছেন আমি কী করতে চাই।’

অভিনেতার প্রশ্ন, ‘তাহলে আমাকে কেন আমার বাচ্চাদের জন্য সেভিংস করে দিয়ে যেতে হবে? ওরা তো ভাড়া বাসায় থাকবে না। ওদের তো বাড়ি আছে। তারপর যদি নিজেরা কিছু করতে না পারে, তার জন্য তো আমি দায়ী না। পড়াশোনা করানো পর্যন্ত আমার ডিউটি। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য আমার বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা রেখে যেতে হবে, এটা আমার দ্বারা সম্ভব না। এটা আমি করতে পারব না।’

অনন্ত জলিল ও লেভেল এবং এ লেভেল শেষ করেছেন ঢাকার অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে। এরপর ম্যানচেস্টার থেকে বিবিএ এবং ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ওপর পড়েছেন। ২০০১ সালে তিনি গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম ‘এজেআই গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্টিজ’।

এই ব্যবসায়ী অভিনেতা সামাজিক কর্মকাণ্ডে প্রচুর টাকা ব্যয় করেন। মিরপুর ১০, বাইতুল আমান হাউজিং ও সাভার মধুমতি মডেল টাউনে তার তিনটি এতিমখানা আছে। এছাড়া সাভারের হেমায়েতপুরের ধল্লা গ্রামে সাড়ে ২৮ বিঘার উপর একটি বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে। করোনার মধ্যে তিনি বহু মানুষকে অর্থ ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। সম্প্রতি সিলেট সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিতদের জন্যও দুই দফায় ৩০ লাখ টাকার অনুদান দেন।

ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল ২০১০ সালে সিনেমা শিল্পে প্রবেশ করেন। সে বছর মুক্তি পায় তার অভিনতি প্রথম সিনেমা ‘খোঁজ- দ্য সার্চ’। সেটির প্রযোজকও তিনি ছিলেন। ‘মুনসুন ফিল্মস’ নামে তার একটি প্রযোজনা সংস্থা রয়েছে। সেখান থেকে এ পর্যন্ত ১০টির মতো সিনেমা বানিয়েছেন এবং প্রতিটিতে তিনি অভিনয়ও করেছেন।

ব্যক্তিজীবনে চিত্রনায়িকা আফিয়া নুসরাত বর্ষার সঙ্গে বিবাহিত অনন্ত জলিল। একটি বাদে তার সবগুলো সিনেমাতে বর্ষাই নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বড় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হলেও মূলত চলচ্চিত্রে আসার পরই দেশব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন অনন্ত এবং বর্ষা। এই তারকা দম্পতির দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। আরিজ ইবনে জলিল এবং আবরার ইবনে জলিল।