পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে জ্বলল লাইট

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে মাওয়া প্রান্তে জ্বলে উঠল সবশেষ ৬২টি স্ট্রিট লাইট। শুক্রবার (১০ জুন) সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ আলো জ্বলে ওঠে। এর আগে বুধবার (৮ জুন) পরীক্ষামূলকভাবে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ৬৪টি ল্যাম্পপোস্টের বাতি জ্বালানো হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে সেতুর ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টের ৩৫৮টির বাতি জ্বলল।

আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুতে যান চলাচল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগেই শেষ হবে সেতুর সব কাজ। বুধবার মূল সেতুতে রোড মার্কিং ও রেলিং স্থাপনের কাজ করা হয়েছে। ২২ জুনের মধ্যে এসব কাজ শেষ হবে।

ঘড়ির কাঁটা ঠিক ৬টা। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে জ্বালানো হলো স্ট্রিট লাইট। হঠাৎ আলো জ্বলল পদ্মা সেতুর ল্যাম্পপোস্টগুলোতে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ল্যাম্পপোস্ট প্রজ্বালন করা হয়েছে। শনিবার বিকেল ৬টায় সেতুর ১২ নম্বর স্প্যানের ল্যাম্পপোস্টগুলো প্রজ্বালন করা হয়। চার লেন সেতুর পশ্চিম পাশে প্রথম বাতি জ্বলে ওঠে। এরপর পূর্ব পাশের বাতি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। বাতি জ্বালানোর মুহূর্তে পদ্মা সেতুর কর্মীদের মধ্যে এক বিশেষ আবেগ দেখা যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মোঃ আবদুল কাদের। এটিই প্রথমবারের মতো সেতুর ল্যাম্পপোস্ট প্রজ্বলিত হলো। এ সময় ২৪ লাইট জ্বালানো হয়।

প্রকৌশলীরা জানান পদ্মা সেতুর স্ট্রিট লাইটগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং সেখানে কেবলগুলো এমনভাবে সেট করা হয়েছে যে সব লাইট কিন্তু কখনও একসঙ্গে নিভে যাবে না, কখনও অন্ধকার হবে না। কখনও বা দু-একটি বাতি যদি সমস্যা হয় তাহলে বিকল্প লাইনে বাতি জ্বলবে। সেতু সবসময় আলোকিত থাকবে। সেতুতে যে ৪২৫টি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়ে গিয়েছিল আগেই। এখন তারা কেবল টেনে সেট করার পর এখন বাতি জ্বালানোর প্রক্রিয়া করেন তারা। সেতুর এই বাতি জ্বালানোর পর সেটা দেখতে আশপাশের মানুষ ভিড় জমিয়েছে। তারা দূর থেকেই পদ্মা সেতুর আলো দেখে অভিভূত।

প্রকৌশলীরা জানান, ২০২১ সালের ২৫ নবেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর ভায়াডাক্টে প্রথম ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছিল। ৬.১৫ কিলোমিটার এই সেতুতে মোট ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে মূল সেতুতে ৩২৮টি, জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪৬টি, মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪১টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। মূল সেতুতে ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ শেষ হয় গেল ১৮ এপ্রিল।

এদিক শুক্রবার পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টে রোড মার্কিং শুরু হয়। এদিকে মূল সেতুর রোড মার্কিং শেষ পর্যায়ে থাকলেও অন্যান্য কাজের কিছু কিছু মালামাল থাকার কারণে রোড মার্কিং সবখানে পুরোদমে করা যায়নি। তবে এখন দুই পারের ভায়াডাক্ট এবং মূল সেতুর বাকি কিছু অংশের রোড মার্কিং আগামী ৭ জুন শেষ করার টার্গেট রয়েছে।

সেতুর ল্যাম্পপোস্টের কেবল টানা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সম্পন্ন হওয়ার পর এখন চলছে ল্যাম্পপোস্টের প্যানেল বক্সে কানেকশনের কাজ। সেতু থেকে দুই প্রান্তের নিচের সাবস্টেশনে বিদ্যুতের কানেকশনের কাজও দ্রুত এগোচ্ছে। ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টের জন্য সেতুতে আটটি প্যানেল বক্স রয়েছে। বিদ্যুতের সাব স্টেশন থেকে এই আটটি প্যানেলে কানেকশন দেয়ার আগে সকল পয়েন্টগুলো শেষ বারের মতো চেক করা হচ্ছে। মাওয়া সাবস্টেশনের বিদ্যুতে মাওয়া থেকে মাঝ পদ্মা অর্থাৎ ২১ নম্ব^র খুঁটি পর্যন্ত বাতি জ্বলবে। বাকি অংশে ২১ নম্বর খুঁটি থেকে জাজিরা অংশ পর্যন্ত বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হচ্ছে জাজিরা সাবস্টেশন থেকে।

দুই পাড়েই ওজন স্টেশনের কাজ এগিয়ে গেলেও চ্যালেঞ্জ এখন ওজন স্টেশনের মেশিন। দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন- ওজন স্টেশনের মেশিন জোগান দেয়ার কথা রয়েছে টোল আদায়ের দায়িত্ব পাওয়া কোরিয়ান কোম্পানির। তারা মেশিন অর্ডার করার কথা জানালেও মেশিনের মডেল জানাতে পারেননি। তাই ওজন স্টেশন নির্মাণ করার দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার প্রতিনিধি বলছেন- মেশিনের মাপজোক না থাকার কারণে কংক্রিটিং শেষ করা যাচ্ছে না। এদিকে যথাসময়ে মেশিন না আসলে বিকল্প মেশিনের ম্যানুয়ালি ওজন পরিমাণ করা হবে। তাই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সেন্সরে ৩ সেকেন্ডে টোল আদায় করার প্রক্রিয়ায় উদ্বোধনী দিবস থেকে করা চ্যালেঞ্জ হবে।

পদ্মা সেতু ঘুরে দেখা যায় দ্রুত গতিতে চলছে রেলিং স্থাপনের কাজ। মাওয়া প্রান্ত থেকে তাকালে মূল সেতুর চোখ যত দূর যায় শেষ পর্যন্ত রেলিং। কর্মীরা সেতুর শেষ কাজটি করছে বড় মমতায়। এই রেলিং স্থাপনে সেতুর চেহারও বদলে গেছে। প্যারাপেট ওয়ালের ওপর ১৫ ইঞ্জি উচ্চতার এই এ্যালুমনিয়ামের রেলিং সেতুর পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়েছে। সেতু কালো কার্পেটিংয়ের ওপর সাদা রোড মার্কিং ফুটে আছে। আর দুই পাশের প্যারাপেট ওয়ালের (রেলিং) নির্দিষ্ট দূরত্বের ল্যাম্পপোস্ট বিশেষ শোভা দিচ্ছে।

সেতুর দুই প্রান্তে ইলিশের ম্যুরাল স্থাপনের জন্য চমৎকার সব নির্মাণ চলছে। সেতুর দুই পারেই নান্দনিক এক পরিবেশ অপেক্ষা করছে। মার্বেল পাথরের নামফলক আরও ম্যুরাল স্থাপনেও কর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করেন। আর নিচ তলায় গ্যাস পাইপের সব কাজ শেষে এখন হলদে পাইপের বিভিন্ন স্থানের দাগগুলো পরিষ্কার করছে। চলছে একেবারে ফিনিশিংয়ের কাজ। মাওয়া প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন পরবর্তী সুধী সমাবেশ নিয়েও নানা কাজ চলছে।