গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, কুতুবপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানিতে ডুবে অনেক গেছে রাস্তা। সেখানে নৌকা চলছে। বাড়িঘরে পানি। মোটকথা কোথাও হাঁটু কোথাও কোমর পানিতে তলিয়ে আছে ডিএনডি এলাকা।
শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও কেমিক্যালযুক্ত পানি, স্যুয়ারেজের পানি বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে একাকার। নিরুপায় হয়ে জরুরি প্রয়োজনে বিষাক্ত এই পানি মাড়িয়ে মানুষজনকে চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে জলাবদ্ধ কবলিত এলাকার মানুষের। এমন অসহনীয় দুর্ভোগ ও ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে একদিকে হাহাকার অন্যদিকে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, ডিএনডির পানি নিষ্কাশন প্রকল্পের কার্যক্রম মন্থরগতিতে চলমান থাকায় বাঁধের ভেতর ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কবে জলাবদ্ধতার এই অভিশাপ থেকে ডিএনডিবাসী মুক্তি পাবে তা অনিশ্চিত।
জানা যায়, ফতুল্লার মুসলিমনগর, ধর্মগঞ্জ, হরিহরপাড়া, কাশিপুর, পৌষাপুকুরপাড়, হাজীপাড়া, দক্ষিণ সস্তাপুর, কোতালেরবাগ, শেহাচর, ইসদাইর, ভূঁইগড়, দেলপাড়া, নূরবাগ, আদর্শনগর, নয়ামাটি, পিলকুনি, বুড়ির দোকান সস্তাপুর, হাজিগঞ্জ, কুতুবপুরে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ওই সব এলাকার বাড়িঘর ছেড়ে মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে। কারণ প্রায় প্রতিটি বাড়ি পানিতে ডুবে আছে। সেখানে সড়কে চলছে নৌকা। নৌকা ও ভ্যানগাড়ি ছাড়া যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা নেই। সড়কের পানি হাঁটু ছাড়িয়ে কোমর পর্যন্ত।
ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম জীবন জানান, এতো পানি এলাকার মানুষ আর কখনো দেখেনি। ভয়াবহ এক পরিস্থিতি এলাকার। সব ডুবে গেছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্ষা মৌসুমে বছরের পর বছর জলাবদ্ধতায় ভোগান্তির শিকার হয় এলাকার মানুষ। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে ডিএনডি প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও সাড়ে চার বছরেও সুফল পাচ্ছে না মানুষ।
কুতুবপুরের নূরবাগের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, ‘বছরে ছয় মাস আমরা পানিবন্দি থাকি। এই সময়ে সড়কে নৌকা চলে। অনেক সময়ে বাধ্য হয়ে এই নোংরা পানি দিয়েই আমাদের হাঁটাচলা করতে হয়৷’
দৌলতপুরের বাসিন্দা জুনায়েদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেন ছিটমহলের বাসিন্দা। আমাদের দেখার কেউ নেই। এই পানি আমাদের জন্য অভিশাপ৷ ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে আছে। ভাবছি বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে অন্যকোথাও চলে যাবো৷’
সূত্র মতে, ২০১৭ সালের ৫ই ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রকল্পের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীন ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। এর আগে, প্রথম ধাপে ২০১৬ সালে একনেকের সভায় ডিএনডি প্রকল্পের জন্য ৫৫৮ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্প পাস হয়। পরবর্তীতে ডিএনডি এলাকায় নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) (প্রথম সংশোধনী)’তে বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পের অগ্রগতি আশানুরূপ না হওয়ায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে ডিএনডিবাসী, এমনটা মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।
এ ব্যাপারে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প চলছে। প্রকল্প শেষ হলে জলাবদ্ধতা থাকবে না। আপদকালীন সময়ে কী করা যায় তা আমরা দেখছি৷’