১ মিনিটে লণ্ডভণ্ড ৩৫০ ঘর

ইট-বালু দিয়ে তৈরি আধাপাকা ঘর সাবিনা বিবির। তিন সন্তানসহ স্বামী আব্দুর রহিম মণ্ডলকে নিয়ে বসবাস ওই ঘরে। ওই চার দেয়ালের মধ্যে বসে বুনেছিলেন অনেক স্বপ্ন। দেখতেন ভবিষ্যতে সুখে থাকার সহজ রাস্তা।

কিন্তু সেসবই শেষ চোখের পলকে। এখন সাবিনা বিবির ঠাঁই খোলা আকাশের নিচে। তিন সন্তানসহ সাবিনার স্বামী ভর্তি হাসপাতালে। তাদের মধ্যে এক ছেলের পা ভেঙে গেছে। খোলা আকাশের নিচে বৈশাখের সূর্যের তীব্র আলোতে বসেও চারিদিক এখন অন্ধকার দেখছেন সাবিনা।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এক মিনিটের কালবৈশাখী সাবিনার মতো ৩৫০ পরিবারের বসতঘর লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। তাদের ঠাঁই এখন খোলা মাঠে। কালবৈশাখীতে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নে এ কালবৈশাখী হয়। এতে ৫০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন বলে জানান। কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দেবে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান মোস্তাফিজুর।

কালবৈশাখীর পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক। তিনি আহতদের হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন বলে জানিয়েছেন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সায়েম সবুজ।

তিনি জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ করে কালবৈশাখী শুরু হয়। এতে কুশদহ ইউনিয়নের গিলা ঝুঁকি, ছাবেদগঞ্জ, মাহাতাবপাড়া, শাল্টিপাড়া, ঘোনাপাড়া গ্রাম লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে তিন শতাধিক বসতঘর। এ সময় আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি।

ক্ষতিগ্রস্ত সাবিনা বিবি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সন্ধ্যায় স্বামী তারাবি পড়ে বাসায় ফেরে। এ সময় হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। হঠাৎ এক মিনিটের ঝড়ে ঘরবাড়ি সব উড়ে গেল। এ সময় আমি এবং আমার এক ছেলে ঘরের দেয়ালের নিচে চাপা পড়ি। স্বামীসহ অন্যরাও আহত হয়েছে। তারা হাসপাতালে ভর্তি আছে। ’

বুধবার সকালে সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নিজেদের সহায়-সম্বল গোছাতে ব্যস্ত ক্ষতিগ্রস্তরা। অনেকেই ভেঙে যাওয়া ঘরের পাশে বাঁশ পুঁতে টিনের ছাপড়া তৈরি করছেন মাথা গুঁজতে। সবার মুখেই অসহায়ত্বের ছাপ।

ওই এলাকার সাবেদগঞ্জের সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামের লোকজন প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিল। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ঘরবাড়ির ইটের ও মাটির দেয়াল ঘুমন্ত গ্রামবাসীর ওপর ভেঙে পড়ে। ’

কুষ্টিয়াপাড়া এলাকার বৃদ্ধ আজগর আলী বলেন, ‘আমার জীবনে এমন ঝড় দেখিনি। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ঝড়ে এলাকা তছনছ করে দিয়েছে। আমার এক নাতির হাত ভেঙে গেছে। আমাদের থাকার জায়গা নেই। ’

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ সোম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের তালিকা মোতাবেক ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৩০০ পরিবার হবে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে আমরা প্রতিটি পরিবারকে ৩০ কেজি চাল এবং এক হাজার টাকা প্রদানের কাজ শুরু করেছি। ’

স্থানীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আমার পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। ’