বাবা চলে গেছেন করোনায়, শ্রাদ্ধের টাকায় হাসপাতালে অক্সিজেন দিল পরিবার

‘আমরা ছয় ভাই-বোন। বছর গড়িয়েছে আমরা পিতৃহীন হ‌য়ে‌ছি। করোনা গত বছরের ৫ আগস্ট বাবাকে কেড়ে নেয়। দীর্ঘ‌দিন পে‌রি‌য়ে গে‌লেও থাম‌ছে না মৃত্যুর মি‌ছিল। হাসাপাতাল গু‌লো‌তেও অক্সিজেন সংকট চরমে। তাই বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রথাগত শ্রাদ্ধানুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছি। সেই খরচে করোনা রোগীদের অক্সিজেন দিয়েছি’, ছলছল চোখে কথাগু‌লো বলছিলেন ক‌রোনায় আক্রান্ত হ‌য়ে মারা যাওয়া গিরীশচন্দ্র কর্মকারের ছোট ছেলে কৃষ্ণ কুমার কর্মকার।

জানা যায়, টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌরসভার অঙ্গশ্রী জুয়েলার্সের প্রতিষ্ঠাতা গিরীশচন্দ্র কর্মকার গত বছ‌রের ৫ আগস্ট ক‌রোনা ভাইরা‌সে আক্রান্ত হ‌য়ে মারা যান। এ বছর তার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান আ‌য়োজ‌নে পা‌রিবা‌রিক সভা চল‌ছিল। এ সময় গিরীশচন্দ্রের বড় ছে‌লে স্বপনচন্দ্র প্রস্তাব ক‌রেন, আমরা কি করোনা রোগীদের জন্য কিছু করতে পারি না? মা বললেন হ্যাঁ, রোগীদের সেবা দিতে পারাই হবে উত্তম কাজ। এতেই তোমাদের বাবার আত্মা বেশি শান্তি পাবে। তোমাদের বাবার মতো অক্সিজেনের অভাবে যেন সখীপুরে আর কাউকে মরতে না হয় সেই ব্যবস্থা কর। পরে পরিবারের সম্মতিতে হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

গতকাল বৃহস্প‌তিবার সকা‌লে গিরীশচন্দ্রের সহধর্মিনী পারুল বালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনটি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রদান করেন। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চিত্রা শিকারী, ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সোবহান,কেন্দ্রীয় মন্দির কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র কুমার সরকার প্রমুখ উপ‌স্থিত ছি‌লেন।

প্রয়াত গিরীশচন্দ্র কর্মকারের বড় ছেলে স্বপন চন্দ্র কর্মকার বলেন, গত বছরও বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান লোকজন খাওয়ানোর আয়োজন না করে সেই খরচের প্রায় এক লক্ষ টাকা সখীপুর কেন্দ্রীয় মন্দির ও শ্মশানের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করেছি। আমরা চাই মানুষ যেন মানবিক দিকটাকে গুরুত্ব দিয়ে সমাজের সকলের কথা ভাবে। এ বছর নিমন্ত্রণ করে লোকজন খাওয়ালে সেটা পেটে থাকবে না। কিন্তু সমাজের জন্য স্থায়ী একটা কিছু করলে তা দীর্ঘদিন ধরে সেবা পাবে। এই চিন্তার ধারাবাহিকতায়ই বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন দিতে পেরে আমরা শান্তি পাচ্ছি। এখান থেকে যদি কিছু মানুষও সেবা পায়, তাহলে আমার বাবার পরলোকগত আত্মা শান্তি পাবে বলে আমাদের পরিবারের সকলের বিশ্বাস।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চিত্রা শিকারী কা‌লের কণ্ঠ‌কে বলেন, এ বিষয়ে যতটা না প্রকাশ করতে পারবো তার চেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। করোনায় বাবার মৃত্যু থেকে শিক্ষা নিয়ে এই ক্রান্তিলগ্নে এমন মানবিক সহযোগিতাকে আমি সব সময় স্বাগত জানাই।

সূত্র : কালের কণ্ঠ