আদালতের নির্দেশে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জন্ম নেয়া সেই পাগলির ফুটফুটে ছেলেটির অবশেষে ঠাঁই হলো গাজীপুরের পূবাইল এলাকার সরকারি ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্রে। সঙ্গে তার মাও থাকবেন সেখানে।
বৃহস্পতিবার ভৈরব উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পুলিশের সহায়তায় মানসিক প্রতিবন্ধী (পাগল) নারী ফরিদা বেগমসহ তার গর্ভে জন্ম নেয়া ছেলে শিশুটিকে ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্রে হস্তান্তর করেছেন।
শিশুটি জন্ম নেয়ার পর শিশুটিকে দত্তক নিতে দুজন ডাক্তারসহ ৬ জন আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ওই পাগলি নারী তার শিশুটি কাউকে দিতে রাজী হয়।
খবর জানার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুবনা ফারজানা বিষয়টি সমাধান করতে উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ আদালতে আবেদন করেন। তারপর গত ২৩ মে শিশুটিকে দত্তক নিতে আদালতে কয়েকজন আবেদন করেন।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আদালতে শুনানি হয়। শিশুর মা যেহেতু তার সন্তান কাউকে দিতে রাজী নয়, এ কারণে আদালতের বিচারক বিষয়টি সুরাহা করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন। তারপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলায় একটি কমিটিতে সভা করে সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিশু ও তার মানসিক প্রতিবন্ধী মা ফরিদা বেগমকে পূবাইলের সরকারি ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়।
জন্ম নেয়া শিশুটির বাবা কে ওই নারী কিছুই বলতে পারে না। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি শুধু বলেন- আমার নাম ফরিদা বেগম এবং বাড়ি ময়মনসিংহ। আর অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে যা বুঝার কোনো উপায় নেই।
গত ১৭ মে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মানসিক প্রতিবন্ধী (পাগল) নারী ফরিদা বেগমের একটি শিশুপুত্রের জন্ম হয়। এই নারী ভৈরবের সম্ভুপুর এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত ঘুরাঘুরি করতেন। তাকে প্রতিদিন কেউ না কেউ খাবার দিতেন।
ঘটনার দিন সে অসুস্থ হয়ে পড়লে এলাকাবাসী দেখতে পায় এই নারীর সম্ভবত প্রসব বেদনা উঠেছে। ঘটনা দেখে পরে লোকজন রাত ১০টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। রাত ১১ টায় হাসপাতালে তার একটি ফুটফুটে ছেলে শিশুর জন্ম হয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিশুটির জন্য জামা কাপড় নিয়ে হাসপাতালে উপস্থিত হন।
তখনই এই নারী তার শিশুকে কাউকে দিতে রাজী হয়নি। হাসপাতালে ১০ দিন থাকার পর ওই নারী শিশুসহ হাসপাতাল ত্যাগ করে ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই পেল।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুবনা ফারজানা জানান, ফুটফুটে সুন্দর শিশুটি দত্তক নিতে কয়েকজন আবেদন করে। কিন্তু প্রতিবন্ধী ওই নারী কোনো অবস্থাতেই শিশুকে কারো কাছে দিতে রাজী ছিল না। পরে আমি বাধ্য হয়ে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে আদালতের শরণাপন্ন হয়। আদালতের আদেশে আমি তাকে পূবাইলের ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি।