সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি বেশ ভাইরাল হয়ে পড়ে বৃহস্পতিবার। ছবিতে দেখা যায়, একদল মানুষ সারিবদ্ধভাব আধভাঙা বাঁধ আঁকড়ে ধরে পিঠ দিয়ে বন্যার পানির ঢেউ আটকানোর চেষ্টা করছেন, যাতে প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে পুরো বাঁধ ভেঙে না যায়।
কারণ ওই বাঁধ ভেঙে গেলে তলিয়ে যাবে তাদের পুরো গ্রাম। মন ঘটনা মানুষের হৃদয়কে দুঃখ ভারাক্রান্ত করে তোলে। সামাজিক মাধ্যমে ওই মানুষগুলোর জন্য সহমর্মিতা জানান অনেকেই। জানা গেছে, অবশেষে মানব পিঠের ওপর আছড়ে পড়া ঢেউ হার মেনেছে। বাঁধটি রক্ষা পেয়েছে। সেই সঙ্গে রক্ষা পেয়েছে পুরো গ্রাম। মানুষের মনে ফিরেছে স্বস্তি।
ওই ঘটনা নিয়ে ‘হাতিয়ায় ঘরবাড়ি বাঁচাতে বেড়িবাঁধে মানব দেয়াল!’ শিরোনামে বুধবার (২৬ মে) একটি সংবাদ প্রকাশ করে বাংলানিউজ। সামাজিক মাধ্যমে তা ভাইরাল হয়ে যায়। জানা গেছে, পানি আর ঢেউয়ের শক্তি কমে গেলে স্থানীয়রা নিজস্ব উদ্যোগে বাঁধটি সংস্কার করেছেন।
খবরে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারে হাতিয়ার সোনাদিয়া চরচেঙ্গা গ্রামের সেই বেড়িবাঁধটির কয়েক জায়গায় ভেঙে যায়। ফলে ঘরবাড়ি বাঁচাতে মানব দেয়াল তৈরি করে বেড়িবাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেন গ্রামবাসী। তারা সফল হন এবং এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধটি সংস্কার করেন।
স্থানীয়রা জানান, এই সংস্কার সাময়িক। সরকারি বরাদ্দের মাধ্যমে মজবুত করে সংস্কার করা না হলে আগামীতে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেড়িবাঁধটি সম্পূর্ণ ভেঙে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
হাতিয়ার সোনাদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ও সাংবাদিক শাহেদ শফিক জানান, মে মাসের শেষ দিকে পূর্ণিমার প্রভাবে এমনিতেই জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিক চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এর সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব যুক্ত হয়ে জোয়ারে পানির উচ্চতা ও প্রবল স্রোতে হাতিয়ার নিম্নাঞ্চলের অনেক বেড়িবাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এরমধ্যে উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নের চরচেঙ্গা গ্রামের বেড়িবাঁধটিও জোয়ারের প্রবল স্রোতে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। তখন স্থানীয় লোকজন নিজেদের ঘরবাড়ি ও জানমাল রক্ষায় নিজেরাই বেড়িবাঁধ রক্ষায় ঢেউয়ের বিরুদ্ধে মানব দেয়াল তৈরি করে। এরপরও কিছু কিছু জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে তারা সংস্কার করে নেয়।
হাতিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন মুহিন জানান, বাংলানিউজের আলোচিত নিউজটি দেখে বৃহস্পতিবার আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাই। ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। বেড়িবাঁধটি সংস্কারে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান হোসেন জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। মূলত ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে হাতিয়ার অনেক বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বেড়িবাঁধগুলো সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।