সুস্থ থাকতে যেসব অভ্যাস মেনে চলার উপদেশ দেয় ইসলাম

রোগ-ব্যাধিমুক্ত জীবন মহান আল্লাহর এক মহা নেয়ামত। হাদিসে পাকে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতাকে মর্যাদা দেয়ার কথা বলেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মহমারি করোনার এ সময়ে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ থাকার জন্য ইসলামের আলোকে জীবনযাপন করা জরুরি। একটি সুন্দর এবং সুস্থ জীবন গড়ে তুলতে ইসলামের ১১টি উপদেশ তুলে ধরা হলো-

১. রোগ-ব্যাধির অন্যতম কারণ হচ্ছে খাদ্য-পানীয়। এ জন্য অতিভোজন ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য থেকে বিরত থাকা। হাদিসের এসেছে, ‘সব রোগের কেন্দ্রস্থল পেট।’

২. খাবার গ্রহণে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। হাদিসে এসেছে, ‘পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্য দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানীয় এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে।’ (ইবনে মাজাহ)

৩. খাদ্যদ্রব্য সব ঢেকে রাখা ও যা কিছু পান করা হয় তাতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন বিশ্বনবি। কারণ এতে রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। হাদিসে এসেছে, ‘সাবধান! তোমরা (পানি পান করার সময়) পানিতে ফুঁ দেবে না।’ (তিরমিজি)

৪. খাওয়ার আগে ও পরে উভয় হাত ভালোভাবে ধোয়ার মাধ্যমে হাতকে জীবাণুমুক্ত করার জোর নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। এটি বিশ্বনবির সুন্নাত। কারণ হাতে বিষাক্ত জীবাণু থাকার কারণে রোগ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৫. শরীরকে সুস্থ, সবল ও সতেজ রাখতে খেলাধুলা, ব্যায়াম ও সাঁতারের প্রতি উৎসাহিত করা। নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম ও বিশ্রাম সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত নামাজ যেমন সুস্থ শরীরের জন্য উপকারি তেমনি রোজা ও হজ মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক।

৬. রোগমুক্ত থাকতে অলসতা ত্যাগ করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ وَأضَلَعَ الدَّيْنِ وَ غَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল আঝযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালাইদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি চিন্তা-ভাবনা, অপারগতা, অলসতা, কৃপণতা এবং কাপুরুষতা থেকে। অধিক ঋণ থেকে এবং দুষ্টু লোকের প্রাধান্য থেকে।’ (বুখারি, নাসাঈ)

৭. মানসিক উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতার পরিবর্তে মানসিক ও দৈহিক সুস্থতা রোগমুক্ত থাকার পূর্বশর্ত। কারণ মানসিক প্রশান্তি ও উৎফল্লতা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই ইসলাম মনসিক ও শারীরিক সুস্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে বৈবাহিক জীবন ব্যবস্থার প্রতি খুব গুরুত্ব দিয়েছে।

৮. ইবাদাত-বন্দেগি, নামাজ-রোজা ও জিকির-আজকারের দ্বারাও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায়। যাতে মানুষ রোগমুক্ত জীবন লাভ করতে পারে। আল্লাহ বলেন-
الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
‘যারা ঈমানদার এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা প্রশান্তি পায়; জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্তি পায়।’ (সুরা রাদ : আয়াত ২৮)

৯. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও রোগমুক্ত থাকার অন্যতম উপায়। হাদিসে এসেছে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। এ কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মহামারি করোনায় ঘন ঘন সাবান-পানি দিয়ে উভয় হাত ধোয়ার কথা বলেছেন। হাত না ধুয়ে খাওয়া ও নাক-মুখ ও চোখে হাত দিতে নিষেধ করেছেন। এটি সুন্নাতের দিকনির্দেশনাও বটে।

১০. পরিবেশ দূষণ রোধ করা। পরিবেশ দুষনের মাধ্যমে রোগ-ব্যধি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা বাড়ির আঙ্গিনা সব দিকে থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে। ইয়াহুদিদের অনুকরণ করবে না। তারা বাড়িতে আবর্জনা জমা করে রাখে। (তিরমিজি)

১১. স্যানেটারি ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। কারণ মল-মূত্র ত্যাগের কারণে রোগ-ব্যাধি অসম্ভবভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তাই পরিবেশ দূষণকারীদের অভিশপ্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হাদিস এসেছে, ‘তোমরা তিন অভিশপ্ত ব্যক্তি থেকে বেঁচে থাক, যে পানির ঘাটে, রাস্তার ওপর ও গাছের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করে।’ (আবু দাউদ)

সর্বোপরি সকল প্রকার মাদক-দ্রব্য বর্জন এবং নেশাগ্রস্ত জীবন পরিহার করাই হচ্ছে সুস্থতা লাভের অন্যতম উপায়। এ কারণে আল্লাহ তাআলা নেশা ও মাদককে হারাম করেছেন।

আল্লাহ তাআলা উপরোক্ত কাজগুলো নিয়ম মোতাবেক সঠিকভাবে সম্পাদন করার তাওফিক দান করুন। সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন লাভ করে রোগমুক্ত জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।