“কনস্টেবলকে মারধরের পর এসআই বলল জ্বিনে ধরেছে”

সহকর্মীর মারপিটের শিকার পুলিশ কনস্টেবল সাইদুর রহমান যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গাঁজাসহ আটক আসামি ছেড়ে দেয়ার প্রতিবাদ করায় চারদিন আগে তাকে মারপিট করেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুবর্ণসরা পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই দাউদ হোসেন।

মারপিটের শিকার সাইদুর যশোর সদর উপজেলার নোঙ্গরপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা চাঁদ আলীর ছেলে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুবর্ণসরা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্তব্যরত অবস্থায় শুক্রবার তাকে মারপিট করা হয়।

ঘটনা গোপন রেখেই যশোর হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল। তবে চারদিন পর এই মারপিটের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। যদিও অভিযুক্ত এসআই দাউদ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সাইদুরকে জ্বিনে ধরেছিল।

আহত সাইদুর রহমান জানান, শুক্রবার (৯ আগস্ট) কালীগঞ্জের বাদুড়গাছা গ্রাম থেকে গাঁজা গাছসহ একজনকে আটক করে তিনি সুবর্ণসরা ফাঁড়িতে নিয়ে যান। এরপর ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই দাউদ ঘুষ নিয়ে ওই লোককে ছেড়ে দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সাইদুর বলেছিলেন, আপনি টাকা খেয়ে আসামি ছেড়ে দিলে, আমাদের অসুবিধা হয়। পাবলিক আমাদের খারাপ বলে। এই কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন এসআই দাউদ। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের এক পর্যায়ে তিনি বুকে লাথি মারেন। তারপর এলোপাতাড়ি মারপিট করেন।

সাইদুর আরও জানান, বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানান। তিনি চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন। ওই দিনই যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন তিনি। তিন দিনেও শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রোববার পুনরায় সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন।

সাইদুর রহমান দাবি করেন, ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই দাউদ নিয়মিত মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করেন। কোনো আসামি ধরে আনলে তিনি টাকা খেয়ে ছেড়ে দেন। এলাকার বিভিন্ন মানুষকে ভয় দেখিয়েও টাকা নেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-শান্তি মেম্বরকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে এক লাখ টাকা গ্রহণ। মাদক ব্যবসায়ী খোড়া শহীদের কাছ থেকে মাসে ত্রিশ হাজার টাকা আদায়, সোনালীডাঙ্গা গ্রামের লিয়াকত, মোটরসাইকেল স্ট্যান্ড, ভ্যান স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদা আদায় করেন তিনি। টাকা খেয়ে আসামি ছেড়ে দেয়ার প্রতিবাদ করায় তাকে নির্যাতন করা হয়েছে বলেও দাবি তার।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুবর্ণসরা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) দাউদ হোসেন বলেন, মারপিটের অভিযোগ সঠিক নয়। সাইদুরকে জ্বিনে ধরেছিল। অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে বাড়ি পাঠানো হয়েছিল। এর আগে তার জ্বিনের সমস্যা ছিল।
দাউদ হোসেন আরও দাবি করেন, কারো কাছ থেকে কোনো টাকা পয়সা নেন না। চ্যালেঞ্জ করে বলছি, গ্রামের হাজার মানুষের কাছে শোনেন, কেউ বলতে পারবে না, আমি কারো কাছ থেকে টাকা নিয়েছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে তিনি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন।