৩ বছরের উন্নয়নে বদলে গেছে দাসিয়ারছড়া

আজ ছিটমহল বিনিময়ের মাত্র ৩ বছর। খুব বেশি সময় নয়। ছিটমহলবাসীর এরই মধ্যে যেন ঘুচে গেছে ৬৮ বছরের বঞ্চনা। ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের ঘোর অন্ধকারের বুকে জেগেছে আলোর বন্যা।

ছিটমহল বিনিময়ের ৩ বছরের মাথায় ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো, প্রশস্ত পাকা রাস্তা, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, সরকারি উদ্যোগে নির্মিত সৃদৃশ্য মসজিদ-মন্দির, বিটিসিএল অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ, ডিজিটাল সেন্টার, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা-এ যেন আলাদীনের চেরাগের ছোয়ায় বদলে গেছে এক নতুন জনপদ দাসিয়ারছড়া।

আজ ৩১ জুলাই ছিটমহল বিনিময়ের ৩ বছর পূর্তিতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার বাসিন্দারা। এর মধ্যে সন্ধ্যা ৭টায় রয়েছে আলোচনা সভা, ৯টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রাত ১২টা ১ মিনিটে ৬৮টি মোমবাতি প্রজ্বালন ও বঙ্গবুন্ধর প্রতিকৃতিত্বে পুষ্পমাল্য অর্পণ, মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হযেছে।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের অধিবাসীরা ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাদের ৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটে। মূল ভূ-খণ্ডে যুক্ত হওয়ার তিন বছরের মধ্যে বর্তমান সরকারের ব্যাপক হারে উন্নয়ন বঞ্চিত ছিটবাসীদের কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। এখন আর কোনো অবরুদ্ধ জীবন নয়, স্বাধীনভাবে বাংলাদেশি নাগরিক হয়ে জীবন-যাপন করছে পুরো ছিটমহলবাসী। প্রতিটি পরিবারের ছেলে-মেয়ে স্থানীয় স্কুল-কলেজে পড়ার সুযোগ ছাড়াও দেশের বড় বড় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ছে। অনেকেই বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনছে। এখন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে যে সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, তার সবই পাচ্ছে সাবেক ছিটমহলের অধিবাসীরা।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, গত দু’বছরে বিশেষ বরাদ্দ প্রায় ২২ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ হয়েছে দাসিয়ারছড়ায়। এর মধ্যে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন, ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এলজিইডির মাধ্যমে ২৪ কিলোমিটার পাকা রাস্তা তৈরি হয়েছে দাসিয়ারছড়ায়। ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কালিররহাটে কমিউনিটি রির্সোস সেন্টার, ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫টি মসজিদ, ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি মন্দির, ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজ, ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি হত দরিদ্র পরিবারের বসতবাড়ি নির্মাণ উল্লেখযোগ্য।
অন্যদিকে ভূমি জটিলতার বিষয়টি সম্পুর্ণ ভাবে নিরসন হয়ে গেছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ১ হাজার ৬৪৩ দশমিক ৪৪ একর ও সরকারি খাস খতিয়ান ভুক্ত ৯ একর জমির প্রাক জরিপ শেষ করে খতিয়ান হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত কল্পে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক ৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। দাসিয়ারছড়াসহ বিলুপ্ত ছিটমহলে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তির ৭৫ দিনের মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৫৬২ পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়েছে দ্রুত গতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরকারের সর্বোচ্চ মহল এখানকার সুবিধা অসুবিধার খোঁজ নিচ্ছেন।

দাসিয়ারছড়া বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও স্কুল এন্ড কলেজসহ মোট ৬টি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হওয়ায় কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা বিরাজ করছে।

দাসিয়ারছড়ার সাবেক পঞ্চায়েত প্রধান নজরুল ইসলাম, আব্দুল হাকিম, আব্দুল জলিল, নুর আলম মাস্টার জানান, এখন তারা বাংলাদেশের নাগরিক পরিচয় দিতে পেরে আনন্দিত ও গর্বিত।

সাবেক ছিটমহল আন্দোলনের নেতা গোলাম মোস্তফা ও মইনুল হক বলেন, ‘আমাদের প্রাণের দাবি দাসিয়ারছড়া ইউনিয়ন ঘোষণা না হলেও যেভাবে উন্নয়ন কাজ তিন বছরে হয়েছে তাতেই আমরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।’

এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও বলেন, ‘বিলুপ্ত ছিটমহলের অবরুদ্ধ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর। এ ছাড়া গত তিন বছরে বিলুপ্ত ছিটমহলে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং উন্নয়নের কাজ চলতে থাকবে।’