ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি টাকা ছাড়া নেন না, কে এই নাসির উদ্দিন?

সারাদেশে প্রতিনিয়ত দুনীতির ঘটনা ঘটে তবে সব ঘটনার চিএ আমাদের সামনে আসে না আমরা জনতেও পারি না। তবে এবার এমনি এক প্রভাবশালি প্রতারকের চিএ আমাদের সামনে এসেছে যার কান্ড গুলো জানলে অনেকেই হতবাক হবেন।

তাঁর নাম নাসির উদ্দিন। একেক দিন একেক মডেলের গাড়ি নিয়ে চলেন। সমাজের প্রভাবশালী মহলে তার চলাফেরা। সরকারের বড় টেন্ডারের কাজ যে কাউকে পাইয়ে দেওয়া ওয়ান-টুর ব্যাপার। তার এমন চলাফেরায় অনেকেই তাকে বন্ধু বানাতে চান। এমন একজন ব্যবসায়ীর নাসিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। নাসির তাকে পদ্মা সেতুর পাথর সাপ্লাইয়ের কাজ পাইয়ে দেবেন। ব্যবসায়ী তার পিছু ছাড়েন না। এমনই এক পর্যায়ে ২০ লাখ টাকা নেন নাসির সেই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। কথা ছিল লাভসহ টাকা ফেরত দেবেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই লাভসহ টাকা ফেরত দেন নাসির। এরপর থেকে সেই ব্যবসায়ী নাসিরকে ছাড়া কিছুই বোঝেন না।

সেই ব্যবসায়ী পরের দানে নাসিরকে আরও ৪০ লাখ টাকা দেন। অল্প সময়ের মধ্যে সেই টাকাও সুদে-মূলে ফেরত পেয়ে ব্যবসায়ী আত্মহারা। স্বপ্ন বুনতে থাকেন আরও লাভের। নাসিরকে ধরেই তিনি আরও টাকা আয় করতে চান। এবার পরিচিতজনদের কাছ থেকে লোন নিয়ে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা তুলে দেন নাসিরের হাতে। ‘

বেশি টাকায় বেশি লাভ’ এমন উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন ব্যবসায়ী। সপ্তাহ, মাস পেরিয়ে যায়, কিন্তু খোঁজ নেই নাসিরের। তার কাছ থেকে আর টাকাও আসে না। রীতিমতো টেনশন বাড়তে থাকে। ব্যবসায়ী এবার ফোন করেন নাসিরের মোবাইল ফোনে। কিন্তু ফোন বন্ধ। ততক্ষণে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

রাজধানীর শাহ আলী থানার একটি প্রতারণার মামলায় গ্রেফতার হয় নাসির। এরপরই তার কোটিপতি হওয়ার চাঞ্চল্যকর সব অজানা তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে। সে পরিচিতি পায় ‘ভিআইপি প্রতারক’ হিসেবে।

নাসিরের হাতে প্রতারিত অনেকেই ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে ভিড় করতে থাকেন। এদের মধ্যে চলচ্চিত্র জগতের অনেকেই ছিলেন। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, নাসির ১০টি সিনেমা তৈরির প্রলোভন দেখিয়ে এফডিসির নায়ক-নায়িকাদের ঘনিষ্ঠ হন। এজন্য প্রতিদিনই নতুন নতুন বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে এফডিসিতে যেতেন। সিনেমার শুটিংয়ের সেট তৈরির কাজ শুরু হওয়ার পর তিনি টাকা না দিয়েই লাপাত্তা।

পুলিশ জানায়, প্রতারণার সব কৌশলই রপ্ত করেছিলেন নাসির উদ্দিন। শূন্য থেকে কোটিপতি হওয়ায় প্রথমে তাকে এলাকার মানুষ চিনত কোটিপতি নাসির হিসেবে। ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পর পরিচিত হয়ে উঠেন ‘হেলিকপ্টার নাসির’ নামে। পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন ফাঁদ পেতে মানুষের টাকা মেরে দেওয়াই মূলত নাসিরের পেশা। কখনো নিজেকে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের একমাত্র পাথর সরবরাহকারী, আবার কখনো চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে পরিচয় দেন।

এই পরিচয়েই ধনাঢ্য লোকজনের সঙ্গে ওঠাবসা করেন নাসির। পদ্মা সেতু ও পাওয়ার প্ল্যান্টের মতো বড় বড় ঠিকাদারি কাজে টাকা বিনিয়োগের কথা বলে মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দিত তাদের। লাখ টাকার লেনদেনে স্বচ্ছতা রেখে প্রথমেই তিনি আস্থা অর্জন করতেন। ধীরে ধীরে সেই অঙ্ক কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেই নাসির লাপাত্তা হয়ে যেতেন। এভাবে গত এক যুগে প্রতারক নাসির অনেকের কাছ থেকে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তারা তথ্য পেয়েছেন।

নাসিরের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে ডজনখানেক মামলা রয়েছে। তিনি কোটি টাকা ছাড়া কারও কাছ থেকে টাকা নেন না। এমনভাবেই নোয়াখালীর এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নাসির হাতিয়ে নেন ১০ কোটি টাকা।

একটি ব্যাংকের পরিচালকের কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকা এবং চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি এলাকার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩০ কোটি টাকা, পাবনা থেকে ২৯ কোটি টাকা, নারায়ণগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয় এই নাসির। নাসির গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে এসব ব্যবসায়ীরা নানা অভিযোগ নিয়ে যান।

প্রতারক নাসির উদ্দিনের সম্পর্কে পুলিশ বলেন, সাধারন ব্যবসায়ীরা তাদের লোভ সামলাতে পারেননি। যে কারণে নাসির উদ্দিনের মতো একজন প্রতারকের হাতে লাভের আশায় তুলে দিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।য নিয়ে নাসির হয়েছেন কয়েকশ কোটি টাকার মালিক।তবে বর্তমানে নাসির কারাগারে রয়েছে তার কঠোর শাস্তির ব্যাবস্থা করা হবে।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন