বেসরকারি খাতকে পেনশনের আওতায় আনার অংশ হিসেবে বেসরকারি ব্যাংক ও গার্মেন্টস খাত ঘিরে একটি পাইলট প্রকল্প চালু হতে যাচ্ছে। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর অংশ হিসেবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দেশে আনুষ্ঠানিক খাত বলতে ব্যাংক ও গার্মেন্টস অন্যতম। এ দুটি খাতে চাকরিজীবীর সংখ্যাও তুলনামূলক বেশি। এ জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে এ দুটি খাতে পেনশনব্যবস্থা চালু করতে চায় সরকার।
গত ১০ বছরের বাজেট বক্তব্যে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন সংস্কারের কথা রয়েছে। বেসরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের কথা আগে খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। কিন্তু এবার বাজেট বক্তৃতায় বেসরকারি চাকরিজীবীসহ সর্বজনীন পেনশনের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, ‘বিদ্যমান সরকারি পেনশন কাজের বাইরে বেসরকারি পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত সব কর্মজীবী মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু করতে চাই।’
প্রস্তাবিত ব্যবস্থার আওতায় সরকার পরিচালিত স্কিমে নিবন্ধন করে একজন কর্মজীবী মাসিক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা করবেন। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষও একটা নির্দিষ্ট অংশ জমা করবে। হতদরিদ্র শ্রমজীবীদের ক্ষেত্রে তাদের অংশের অতিরিক্ত হিসেবে সরকার পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ওই হিসাবে জমা করবে।
এর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গঠিত তহবিল বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয় সর্বজনীন পেনশন তহবিলে জমা হতে থাকবে। ক্রমপুঞ্জীভূত অর্থ ও আয়ের পরিমাণের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অবসরকালে মাসিক পেনশন পাবেন। একটি টেকসই সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা প্রবর্তনের কাজ এ অর্থবছরেই শুরু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী। অন্তত কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকায় পরীক্ষামূলক উদ্যোগ হিসেবে চালু করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি খাতকে পেনশনের আওতায় আনার অংশ হিসেবে সবার আগে দেশের বেসরকারি ব্যাংক ও গার্মেন্টস খাত ঘিরে একটি পাইলট প্রকল্প নিতে চায় সরকার। ব্যাংক ও গার্মেন্টসে চাকরিজীবীর সংখ্যাও তুলনামূলক বেশি। এ কারণে দুটি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর পর পর্যায়ক্রমে আনুষ্ঠানিক অনানুষ্ঠানিক উভয় ধরনের বেসরকারি খাতকে পেনশনের আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি খাতের ৭ থেকে ৮ লাখ মানুষ পেনশনের আওতায় রয়েছে। এর বাইরে ৩৫ লাখ হতদরিদ্র লোক মাসিক ৪০০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ বয়স্ক। প্রতিনিয়ত এর সংখ্যা বাড়ছে। এ জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সবার কাছে পৌঁছে দিতে এবং বৈষম্য কমাতে তিনি বদ্ধপরিকর। বিদ্যমান সরকারি পেনশন কার্যক্রমের বেসরকারি আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত সব কর্মজীবী মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে চাই।
জানা গেছে, বেসরকারি ব্যাংগুলোয় ইতিমধ্যে কিছু অবসর সুবিধা কার্যকর রয়েছে। এমনকি রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলোও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হওয়ার কারণে পৃথক নিয়মে অবসর সুবিধা দেওয়া হয়। আর গার্মেন্টস খাতেও কোম্পানিগুলোর উপরের পদগুলোয় কারো কারো বেলায় অবসরকালীন সুবিধা রয়েছে। কিন্তু নিচের দিকের পদে আর শ্রমিক পর্যায়ে তেমন কার্যক্রম চালু নেই।
এ ছাড়া ব্যাংক ও গার্মেন্টস কোম্পানি একেকটার আর্থিক সামর্থ্য একেক রকম। ফলে মালিকপক্ষ নিজেদের ইচ্ছামাফিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে থাকে। কেননা এসব প্রতিষ্ঠান কোনো কারণে লোকসানে পড়লে সরকার তার লোকসান কাটানোর কোনো উদ্যোগ নেয় না। ফলে বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা সহজ হবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। একাধিক বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ব্যাংক ও গার্মেন্টস খাতে কমবেশি এক কোটি মানুষ কর্মরত এবং এরা সবাই প্রাতিষ্ঠানিক। তাদের ব্যাপারে তথ্য পেতে সরকাররের তেমন এটা অসুবিধা হবে না। এ ছাড়া খাত দুটিকে বেশ শৃঙ্খলিত খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দেশের মোট বয়স্ক জনসংখ্যার মধ্যে পেনশনভোগীর সংখ্যা অতি সামান্য। শুধু সরকারি চাকরিজীবী ও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার সাত থেকে আট লাখ পরিবার নিয়মিত পেনশন পেয়ে থাকে। এ ছাড়া হতদরিদ্র ৩৫ লাখ লোক মাসিক ৪০০ টাকা হারে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বাইরে গিয়ে সবার জন্য পেনশনব্যবস্থা চালু করতে পারলে দেশে একটি বড় কাজের সূচনা হবে। তবে কাজটি অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ। অর্থমন্ত্রী শুরু করে দিয়ে যেতে পারলে শুভসূচনা ঘটবে।