প্রাণবন্ত অভিনয়ের নাটক

ধর্মের নামে মানুষ হত্যা নতুন কিছু নয়। সৃষ্টির শুরু থেকেই আরম্ভ হয়েছে এই লীলা। এমনই এক হত্যাযজ্ঞের আখ্যান বর্ণনা করেছেন নাট্যকার রুবাইয়াত্ আহমেদ তার ‘গহনযাত্রা’ নাটকে। এক নারী যে তার সম্প্রদায়ের উপরে ঘটে যাওয়া নির্মম অত্যাচার আর হত্যার বর্ণনা করে। নাটকে উঠে আসে—ভেসে আসে একে একে অনেক চরিত্র আর চরিত্রগুলোর সুন্দর রূপায়ন ঘটে সৈয়দা শামসি আর সায়েকার একক অভিনয়ে। নাট্যকার রুবাইয়াত্ আহমেদ চমত্কার বর্ণনা এবং সংলাপের মাধ্যমে অনেক সুন্দর একটি আখ্যান নির্মাণ করেছেন আর তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন নির্দেশক সুদীপ চক্রবর্তী। তিনজনের অসাধারণ একটি সমন্বয়। একজন নাট্যশিল্পীর আসলে নাচ জানা থাকলে মঞ্চ মাতানো বা দর্শককে মোহিত করে রাখা যে তার জন্য একেবারেই নস্যি তা ২৫তম প্রদর্শনীতেও প্রমাণ করে ছাড়লেন সায়েকা। এই যাত্রা তার শুরু নাটকের শুরু থেকেই। থেমে থেমে অভিনয় করছেন আবার বর্ণনা করছেন সেই ঘটনার। কখনো স্বপ্নের মধ্যে ভেসে যাচ্ছেন অতীতে আবার ফিরে আসছেন বর্তমানে। অভিনয়শিল্পীর জন্য মুখোশের ব্যবহার খুবই সহায়ক হয়েছে। খুব দ্রুত আলাদা হয়ে যাচ্ছে দুটো চরিত্র। একটি যে আখ্যান বর্ণনা করছেন আর একটি তার ভিতরের আমি—হয়তোবা স্রষ্টা। আমি এবং আমার আমির দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়েই এগিয়ে গেছে নাট্যের অনেকটা অংশ। নাট্যকার দেখিয়েছেন অদ্বৈত স্রষ্টা থেকেই বিশ্বের সবকিছু বিভাজিত হয়েছে, ‘দ্বৈত’ হয়েছে, এই অনুপম দর্শন গহনযাত্রায় ক্রিয়াশীল থাকায় একে বলা হয়েছে ‘দ্বৈত ও অদ্বৈতের আখ্যান’।

নাট্যকার তার চরিত্রকে পাহাড়-পর্বত, নদীনালা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন তার সেই গ্রামে। যেখানে তার আপনজন আত্মীয়জন প্রিয়জনকে মেরে ফেলেছে ধর্মের রোষানল। চিত্কার করতে কাঁদতে থাকে সে। সায়কার সেই আর্তনাদের সাথে দর্শকও যেন একাত্ম হয়ে যায়। তাই নাটক শেষে দর্শক হুহু করে কাঁদতে থাকে। নির্দেশক সুদীপ চক্রবর্তী কয়েকটি মুখোশ ব্যবহারের মাধ্যমে চরিত্রগুলোকে যে আলাদা করে ফেলেছেন, তা খুবই ভালো লেগেছে। নাটকের এতগুলো চরিত্র আর ঘটনার যে বিস্তার তাকে ছাঁচে ফেলে ছোট করে এনে বেশ পাণ্ডিত্যের পরিচয় দিয়েছেন নির্দেশক। সেই সাথে নাটকের আলোর ব্যবহার বেশ আকৃষ্ট করেছে। অসাধারণ অভিনয়ের এই নাটক নিয়ে সৈয়দা শামসি আর সায়েকা তার দল পদাতিক নাট্য সংসদ, টিএসসির সাথে যাচ্ছেন ভারতের নৈহাটি ঐক্যতান মঞ্চে। ‘দলের কালরাত্রি’, ‘জনমাংক’, ‘গুণজান বিবির পালা’র সাথে সেখানে ২১ জুলাই আবারও অভিনীত হবে সায়েকার একক অভিনয়ের নাটক ‘গহনযাত্রা’।