বিনম্র শ্রদ্ধা

গত ৭ জুলাই ভোর ৪টায় রাজধানীর ধানমন্ডির একটি প্রাইভেট হাসাপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী রানী সরকার। পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য জীবনের শেষ সময়ে এসে তিনি প্রধানমন্ত্রী মেখ হাসিনার আর্থিক সহযোগিতার কারণেই বেশ ভালোভাবে দিন যাপন করছিলেন। আরো বিস্তারিত জানাচ্ছেন নূপুর বন্দ্যোপাধ্যায়

চলে গেলেন দেশীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী, চলচ্চিত্রের অনেক কালজয়ী ঘটনার সাক্ষী, আমাদের চলচ্চিত্রের বটবৃক্ষ রানী সরকার। গত শনিবার ভোর চারটায় রাজধানীর ধানম্লির একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অভিনয়কে ভালোবেসে সারা জীবন ক্যামেরার সামনে অভিনয়ই করে গেলেন তিনি। তবে জীবনের শেষপ্রান্তে এসে কোনোরকম দিনযাপন করছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ২০১৬ সালের ১১ মে রানী সরকারের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুলে দেন ‘আজীবন সম্মাননা’ পদক। সারা জীবন চলচ্চিত্রে নিরলসভাবে অভিনয় করে যাওয়ার কারণে এবং চলচ্চিত্রের জন্য নিজেকে নিবেদিত করার জন্য তাকে ‘আজীবন সম্মাননা’য় ভূষিত করা হয়েছিল। অভিনয় জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ এই প্রাপ্তি নিয়ে দারুণ খুশি ছিলেন রানী সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রানী সরকারকে দুই দফায় বিশ লাখ টাকাও সহযোগিতা করেছিলেন। যে কারণে জীবনের শেষদিনগুলোতে জীবিকার জন্য তাকে খুব বেশি কষ্টও করতে হয়নি। আজীবন সম্মাননা পেয়ে রানী সরকার বলেছিলেন, ‘সত্যিই আমার জন্ম সার্থক হলো, জীবন ধন্য হলো।’ রানী সরকারের জন্ম সাতক্ষীরার সোনাতলা গ্রামে। তার বাবা মরহুম সোলায়মান মোল্লা ছিলেন গাঁয়ের নামকরা লোক।

১৯৫৮ সালে তিনি এ জে কারদারের নির্দেশনায় প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটির নাম ছিল ‘ দূর হ্যায় সুখ কা গাঁও’। এরপর রানী সরকার অভিনয় করেন ‘চান্দা’ ছবিতে। সে সময় ছবিতে তিনি চিত্রনায়িকা শবনমের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ছবিটি নির্মাণ করেছিলেন এহতেশাম। এই ছবিতে জুটি হয়ে অভিনয় করেছিলেন রহমান-শবনম। এরপর রানী সরকার ‘তালাশ’, ‘বন্ধন’, ‘সঙ্গম’, ‘ইস ধারতি পার’, ‘পেয়সে’, ‘কেয়সে কাহু’, ‘আযান’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘কাঁচ কাটা হীরে’, ‘বেহুলা’, ‘আনোয়ারা’, ‘ছদ্মবেশী’, ‘ভাওয়াল সন্ন্যাসী’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘শুভদা’, ‘দেবদাস’সহ আরও অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন। সবমিলিয়ে তার অভিনীত ছবির সংখ্যা হবে প্রায় ২৬০টি।

রানী সরকার প্রসঙ্গে কিংবদন্তি নায়িকা শবনম বলেন, ‘রানী দিদির সঙ্গে ‘চান্দা’ চলচ্চিত্রেই আমার প্রথম কাজ হয়। এরপর আমরা একসঙ্গে ‘তালাশ’সহ আনও বহু চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। অভিনয়ের জন্য একজন নিবেদিতপ্রাণ অভিনেত্রী ছিলেন তিনি। আমাদের মধ্যে যোগাযোগটা ছিল শেষ সময় পর্যন্ত। আমাকে ঝরনা বলেই ডাকতেন। খুব আদর করতেন আমাকে। একে একে সবাই চলে যাচ্ছেন আমার শুরুর সময়ের। রানী দিদিও চলে গেলেন। আরও একা হয়ে গেলাম।’