দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১’র সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এ বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বুঝে নেওয়ার পরই স্যাটেলাইটটির বাণিজ্যিক অপারেশনে যাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ১১ মে যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডোর কেপ কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হয়। এরপর ৩৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নিরক্ষরেখার ১১৯ দশমিক ৯ ডিগ্রিতে সেট হয় এটি।
স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১’র অপারেশন তথা পরিচলানায় কাজ করছেন দেশের ৩০ জন বিজ্ঞানী ও গবেষক। তাদের গাইড হিসেবে আছেন এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়ার বিজ্ঞানীরা। জানা গেছে, থ্যালেসের সঙ্গে বাংলাদেশের তিন বছরের চুক্তি রয়েছে। যদিও এই সময়ে তারা বাংলাদেশে গাজীপুরের গ্রাউন্ড স্টেশনে থেকেই বিজ্ঞানীদের গাইড করবেন।
অবশ্য তিন বছরের মধ্যে দেশের বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইট পরিচালনার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেবেন বলে জানান বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মেসবাহুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে স্যাটেলাইটের আইওটি (ইন অরবিট টেস্ট) টেস্ট সফলভাবে শেষ হয়েছে। সিগন্যাল ঠিকভাবেই পাওয়া যাচ্ছে। আরও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। সব মিলিয়ে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বুঝে নিতে সেপ্টেম্বর মাস লেগে যেতে পারে। সবকিছু সফলভাবে সম্পন্ন করেই বাণিজ্যিক অপারেশনে যাওয়া উচিত।’
যদিও এর আগে বলা হয়েছে আগস্টের মাঝামাঝি বাণিজ্যিক অপারেশনে যাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। সিগন্যাল টেস্টিং, ইউজার বুঝে হস্তান্তর করাসহ কারিগরি আরও অনেক ধরনের কাজ (সিভিল অংশের কিছু কাজসহ) বাকি থাকায় আগস্টে স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক অপারেশনে যাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্টদেরই।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের জন্য গঠিত বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড ইতোমধ্যে স্যাটেলাইটের বিপণন কাজ শুরু করেছে। ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে লিয়াজোঁ ইউনিট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও দেশের অভ্যন্তরে স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা আগেই যাচাই করা হয়েছে। সব ধরনের সিগন্যাল টেস্টিং সম্পন্ন হওয়ার পরেই বাণিজ্যিক সেবা নেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সঙ্গে যুক্ত পক্ষগুলো।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন,‘আমরা টেস্ট, স্যাটেলাইট টেকওভার ও মার্কেটিং করবো। অনেক কিছু আমাদের করা বাকি রয়েছে। আমরা ধীরে ধীরে সেসব আয়ত্তে আনছি ও সফলতার সঙ্গেই করছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ২৫ হাজার সমুদ্রগামী জাহাজ, লঞ্চসহ অন্যান্য জলযান ট্র্যাক করার জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সহায়তা নেওয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্ট দুই কর্তৃপক্ষের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে। এজন্য স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্য থেকে একটি এই কাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। একটি ট্রান্সপন্ডারের সক্ষমতা হলো ৩৬ মেগাহার্টজ। এই একটি ট্রান্সপন্ডারের সক্ষমতা দিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজ, লঞ্চ ও অন্যান্য জলযান কোথায় আছে, কোথায় নোঙর করেছে, কোথায় কোন চরে আটকে পড়েছে বা ডু্বে গেছে তা চিহ্নিত করা যাবে। দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে কিনা তা চিহ্নিত করে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।