ঢাকার শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন ও গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ভরপুর ‘আহসান মঞ্জিল’ নিয়ে এখন পর্যটকদের আগ্রহের কমতি নেই। স্মরণীয় ঘটনাবলী, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্মৃতি বিজরিত ‘গোলাপি’ এই ভবনটি দেশি-বিদেশী পর্যটকদের পদচারনায় মুখর। ঐতিহাসিক জ্ঞানার্জনে প্রতিদিনই ভ্রমণপিয়াসিরা ‘আহসান মঞ্জিল’ ঘুরে যান। আগেকার দিনের কৃষ্টি-কালচারের সাথে পরিচিত হয়ে ফিরে যান প্রফুল্ল চিত্তে।
এ ছাড়া ভবনের চারপাশের সারি-সারি গাছ আর সবুজাভ মাঠের মায়াময়-স্নিগ্ধ পরিবেশও প্রশান্তি আনে দর্শনার্থীদের মনে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, পুরনো ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ‘আহসান মঞ্জিল’ ছিল ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারীর সদর কাচারি। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে এটি প্রতিষ্ঠা করেন নওয়াব আবদুল গনি। তার ছেলে খাজা আহসানুল্লাহ’র নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর অযত্নে-অবহেলায় আহসান মঞ্জিল ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। পরে স্থাপত্য সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব উপলব্ধি করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটি সংস্কার করে যাদুঘর ও
পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দেন।
রক্ষণাবেক্ষণ শেষে ১৯৯২ সালের ২০ সেপ্টম্বর জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্যে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পরিচালিত ‘যাদুঘর’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যাদুঘরে এপর্যন্ত সংগৃহীত নিদর্শন সংখ্যা রয়েছে চার হাজার ৭৭টি। আহসান মঞ্জিলের প্রবেশ মুখ পেরুলেই চোখে পড়বে মূল ভবন। দেখা যাবে
বুড়িগঙ্গার দিকে মুখ করে দোতলা থেকে সরাসরি প্রাসাদের আঙিনায় নেমে আসা সিঁড়ি। যাদুঘরে প্রবেশ করতে হয় ভবনের পেছন দিয়ে। পুরো ভবনের ৩১টি কক্ষের
মধ্যে ঘুরে দেখা যাবে ২৩টি কক্ষ। নীচতলা থেকে উপর তলা ঘুরে ভবনের মূল প্রবেশ পথের সিঁড়ি বেয়ে আঙিনায় নামতে হয়।
আহসান মঞ্জিল দুটি অংশে বিভক্ত। পূর্ব পাশের গম্বুজযুক্ত অংশকে বলা হয় প্রাসাদ (রঙমহল)। পশ্চিমাংশের আবাসিক প্রকোষ্ঠাদি নিয়ে গঠিত ভবনকে বলা হয়
অন্দর মহল। মাঝখানে গোলাকার কক্ষের ওপর অষ্টকোণ বিশিষ্ট উঁচু গম্বুজটি অবস্থিত। পূর্বাংশে দোতলায় বৈঠকখানা, গ্রন্থাগার, কার্ডরুম, তিনটি মেহমান
কক্ষ, পশ্চিমে একটি নাচঘর ও কয়েকটি আবাসিক কক্ষ রয়েছে। নিচতলায় আছে ডাইনিং হল, বিলিয়ার্ড কক্ষ, দরবার হল ও কোষাগার। প্রাসাদ ভবনের উভয় তলায়
উত্তর ও দক্ষিণে রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা।
এছাড়াও প্রতিটি কক্ষে দর্শনার্থীদের জন্যে রয়েছে, নওয়াব আমলের ডাইনিং রুম, বড় বড় আয়না, নিপুণ নকশার খাট-পালং, লাঠি, কাঁচা পয়সা, রাজকীয় সীলমোহর, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, যুদ্ধবস্ত্র, তরবারি, হুক্কা, বাদ্যযন্ত্র, আলমারি, সিন্দুক, কাচ ও চিনামাটির থালাবাসন, হাতির মাথার কংকাল, বিভিন্ন ধরণের রুপা ও ক্রিস্টালের তৈরী চেয়ার-টেবিল, নানা রকম তৈলচিত্র, ফুলদানি, আতরদানি, পানদান, সোনা ও রুপার তারজালিকাজ আহসান মঞ্জিলের মডেলসহ হরেক রকম নির্দশন।
আহসান মঞ্জিল দেখতে আসা সিলেটের সংবাদকর্মী পাভেল সামাদ বলেন, আহসান মঞ্জিলের ঐতিহাসিক নিদর্শন ও এর সৌর্ন্দয্য বার বার কাছে টানে আমায়। এ নিয়ে তৃতীয় বারের মতো এখানে ঘুরতে আসা।