বৈরি আবহাওয়ার কারণে আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে শেষ মাস জুনে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে কক্সবাজেরর টেকনাফ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। জুনে এনবিআর’র লক্ষ্যমাত্রা ৯ কোটি ২৭ লাখ টাকার মাঝে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বন্দর সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
বন্দরের শুল্ক স্টেশন সূত্র জানায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের শেষ মাস জুনে ২০৪টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে ৭ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার রাজস্ব আদায় হয়। কিন্তু এ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করাছিল ৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা কম আদায় হয়। এ মাসে মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি হয় ২৫ কোটি ৩৪ লাখ ১৪ হাজার টাকার।
অপরদিকে ৩২টি বিল অব এক্সপোর্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ৯৫ লাখ ৪২ হাজার টাকার পণ্য রফতানি হয়েছে।
সূত্র জানায়, জুন মাসে একের পর এক লঘু ও নিম্নচাপে বৈরি আবহাওয়া লেগে থাকায় মিয়ানমার থেকে পণ্য বোঝায় ট্রলার আসতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। বর্ষার সূচনা মৌসুম হওয়ায় বৃষ্টির কারণেও সমস্যায় পড়তে হয় সংশ্লিষ্টদের। ফলে বাণিজ্যিক পণ্য কম আমদানি হওয়ায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
এরপরও মিয়ানমার থেকে শাহপরীরদ্বীপ করিডোরে ৭ হাজার ৭১৮টি গরু, ২ হাজার ৮৫৭টি মহিষ আমদানি করে ৫২ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। বর্ষণে শাহপরীরদ্বীপ করিডোরের বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়। আমদানিকৃত পশু রাখার স্থানটি জলাবদ্ধতার কারণে পশু মজুদ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমদানিকারকদের। সরকার এ করিডোর দিয়ে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করলেও সংস্কারের তেমন মনযোগী নয় বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
এছাড়াও স্থলবন্দর কেন্দ্রীক ব্যবসায়ীরা নানা সমস্যায় ভুগছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা। ব্যবসায়ীদের দাবি, বন্দরে অহেতুক চার্জ আদায় করলেও সেভাবে সুযোগ-সুবিধা নেই। পর্যাপ্ত জেটির ব্যবস্থা ও শ্রমিক সরবরাহ থাকলে বানিজ্যিক পণ্য আরও দ্বিগুন আমদানি-রফতানি বাড়ানো সম্ভব। আর পরিবহন খাতে নজরদারি বাড়ানো হলে ব্যবসায়ীরা পথের হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে, বাণিজ্যে আসবে গতি।
টেকনাফ স্থল বন্দর শুল্ক কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, জুন মাসে বৈরি আবহাওয়ার কারণে পণ্য আমদানি কম হয়। তাই মাসিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ব্যাহত হয়েছে। বৈরি আবহাওয়া কেটে গেলে বাণিজ্য ও রাজস্ব আয়ে আবারও গতি ফিরে আসবে।
তিনি আরও বলেন, পণ্য আমদানি ও রফতানিতে ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে শিগগিরই কাজ শুরু হবে। বন্দরের রাজস্ব আয় স্বাভাবিক রাখতে তিনি ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে উদ্ভূত রোহিঙ্গা সমস্যার কারনে সীমান্ত বাণিজ্যে ধস নামে। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে কিছুটা মিয়ানমারে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে আসলে আমদানি-রফতানিতেও গতি আসে। রাজস্ব আদায় পূর্বের মতো লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বৈরি আবহাওয়ার কারণে পণ্য আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।