বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে ‘অর্থহীন’ প্রশ্নে কয়েকজন জন সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপার পর জাতীয় সংসদে এক সদস্যের বক্তব্যে তার ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই সংসদ সদস্য মুহিতকে ‘জাতীয় পার্টির মন্ত্রী ছিলেন’ বলেছিলেন। পরে মুহিত তার বিরুদ্ধে ‘যথাযথ’ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।
সোমবার সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনায় এসব কথা হয়। এর আগে গত ৮ জুন বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন সাংবাদিকের প্রশ্ন শুনে এগুলোকে অর্থহীন আখ্যা করে ক্ষোভ ঝাড়েন অর্থমন্ত্রী। এগুলো কোনো প্রশ্নই না উল্লেখ করে সেদিন তিনি বলেন, সাংবাদিকরা কেউ বাজেট ফলো করেননি। কিন্তু কিছু সেট প্রশ্ন নিয়ে এসেছেন। এগুলো নিয়ে কথা বলতে তার লজ্জা হয়।
সিলেট-৫ আসনে জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন অর্থমন্ত্রী মুহিতকে ‘জাতীয় পার্টির মন্ত্রী ছিলেন’ বলে উল্লেখ করেন। পরে মুহিত বলেন, ‘আমি কোনোদিন জাতীয় পার্টির সদস্য ছিলাম না, মন্ত্রীও ছিলাম না। জেনারেল এরশাদের সামরিক সরকারের মন্ত্রী ছিলাম। জাতীয় পার্টির তখন জন্মও হয়নি। আশা করি তারা মনে রাখবেন।’ ‘যদি মনে না রাখেন তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে টানা ১০টি বাজেট দেয়া মুহিত প্রথম মন্ত্রী হন এরশাদের সামরিক সরকারের আমলে। তখন তিনি দুটি বাজেট দিয়েছিলেন। এরশাদ ১৯৮২ সালে ক্ষমতা দখলের পর অন্তর্বর্তীকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন করেছেন। সে সময় ওই সরকারের ছিলেন মুহিত। এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে পার্টি গঠন করেন এরশাদ। তখন সরকার থেকে পদত্যাগ করেন মুহিত।
সাবেক আমলা মুহিত সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দেন ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে। তখন সিলেট-১ আসন থেকে নৌকা মার্কায় নির্বাচন করে হেরে যান। তবে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জেতার পর তাকে অর্থমন্ত্রী করা হয়। সোমবার জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এরশাদ সরকারে মুহিতের মন্ত্রিত্বের বিষয়টি তোলেন। বলেন, ‘জাতীয় পার্টির বহু পূর্বেই জেনারেল এরশাদের সামরিক সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাজেট দিয়েছেন। আমরা এটা রেকর্ডে রাখতে চাই, তিনি (মুহিত) আমাদের জাতীয় পার্টির কখনোই সদস্য ছিলেন না।’
‘আরও আশ্বস্ত করতে চাই আপনার মতো একজন জ্ঞানী-গুণী মানুষকে ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টি কখনোই স্থান দেবেন না। এর জন্য আপনাকে আদালতে যেতে হবে না।’ পরে সেলিম উদ্দিন আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি একজন সংসদ সদস্য। মাননীয় অর্থমন্ত্রী যেভাবে ধমকিয়েছেন… সহকর্মী হিসেবে এভাবে ধমকানোর সুযোগ নেই।’ ‘তিনি প্রবীণ, আমি তার সন্তানের বয়সী। আমি ভুল বললে আমাকে বলে দেবেন। কিন্তু আমাকে এভাবে বলা তার উচিত হয়নি।’ এপর্যায়ে স্পিকার কাজী ফিরোজের মাইক বন্ধ করে দিয়ে ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে কথা বলতে বলেন।