শাকিব খান আর জয়া আহসান আমার পছন্দের : পরমব্রত

গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত, এই ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। সব ঋতুতেই একই পোশাক পরেন কুড়িগ্রামের দিনমজুর মমিনুল ইসলাম। তার মাথায় মানকি টুপি, গায়ে টি-শার্টের ওপর জ্যাকেট। এভাবেই গত ৩০ বছর পার করেছেন তিনি। পোশাকের সঙ্গে তার মাথার লম্বা চুল ও দাঁড়ি-গোফ। এলাকায় তিনি পরিচিত ‘ভিন্ন মানুষ’ হিসেবে। মমিনুলের খাওয়া-দাওয়ায়ও রয়েছে ভিন্নতা।

গত এক সপ্তাহ ধরে প্রখর রোদ ও প্রচণ্ড গরমে সাধারণ মানুষ যখন অতিষ্ঠ তখনও একটু বদলাননি মমিনুল ইসলাম। প্রখর রোদে গায়ে জ্যাকেট ও মাথায় শীত নিবারণের মানকি টুপি পরে চলাচল করছেন তিনি।

আজ রোববার জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রখর রোদে মধ্যেই দেখা মেলে মমিনুল ইসলামের। কথা হয় তার সঙ্গে। পড়ে সেই আদ্ভুত মানুষটির সঙ্গে আলাপ করে মজার মজার তথ্য বেরিয়ে আসে।

মমিনুল জানালেন, তার বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষা গজেরকুটি গ্রামে। তার পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। অনেক কষ্ট করে দুই মেয়েকেই বিয়ে দিয়েছেন। পাঁচ ছেলের সবাই স্কুলে পড়ে। প্রথম ছেলের সামনে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। দ্বিতীয় ছেলে দশম শ্রেণি, তৃতীয় ছেলে ষষ্ট শ্রেণি, চতুর্থ ছেলে চতুর্থ শ্রেণি, পঞ্চম ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।

মমিনুল অনেক কষ্টে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। তার প্রথম ছেলে ছামিউল সংসারে সহযোগিতার জন্য মানুষের বাড়িতে মাঝে মধ্যে দিনমজুরের কাজ করে।

মমিনুলের ভাষ্যমতে, তিনি মাসে একদিন গোসল করেন। নিজের খাবার নিজেই রান্না করে খান। কারো হাতের রান্না তিনি পছন্দ করেন না। এমনকি নিজের স্ত্রী হাতের রান্নাও খান না! গত ৩০ বছর ধরেই তিনি নিরামিষ খাবার খাচ্ছেন। কোনো মাংসও তিনি খান না। এমনকি মাছ, শুটকি, ডিমও খেতে পছন্দ করেন না। শুধুমাত্র দুবেলা নিরামিষ খেয়ে বেঁচে আছেন।

মমিনুলের ‘অদ্ভুদ’ চেহারা দেখে গ্রামের অনেক মানুষেই তাকে পাগলা বলে তিরুষ্কার করে।

মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মুই ৩০ বছর ধরে একই পোশাকে আছং। মোর কোনো চলাফেরা করতে সমস্যা হয় না। সাধনা শুধুই মুই আল্লাহর নাম করে চলং। ১২ মাসেই এভাবেই মুই চলং। আল্লাহর কৃপায় মোর কোনো সমস্যা নাই। মোর একটু সমস্যা আছে সেটা হলো মুই গরিব মানুষ। দিনমজুরের কাজ করে সাত সদস্যের সংসারের ঘানি টানা খুবেই কষ্টের। সরকার যদি মোক অনুদান দিত তাইলে মোর সংসারে কিছুটা শান্তি ফিরে আসত। ’

এ বিষয়ে গজেরকুটি ওয়াডের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য এরশাদুল হক জানান, মমিনুল পাগল নন। তিনি বড় বড় দাঁড়ি-গোফ ও একই পোশাকে ৩০ বছর ধরে জীবনযাপন করছেন। এ কারণে তাকে গ্রামে কিছু লোক তিরষ্কার করে পাগল বলে ডাকে। আবার তিনি এলাকায় মানুষ হিসেবেও পরিচিত।

এরশাদুল হক আরও জানান, মমিনুল খুবই গরিব। অনেক কষ্টে দিনমজুরের কাজ করে খেয়ে-না খেয়ে সাত সদস্যের সংসার চালান। আগামী অর্থ বছরে নতুন কোনো অনুদান আসলে তাকে দেওয়া হবে।