মাটির নিচে মাদক কারবার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মাদককািরবারি বিল্লালের আলিশান বাড়ির মাটির নিচে সুড়ঙ্গ পথে আন্ডারগ্রাউন্ড মাদকের গোপন আস্থানা আবিস্কার করেছে পুলিশ। বেডরুমের মেঝেতে ঢাকনা দেয়া গোপন সুড়ঙ্গ পথের মুখ। মাদকের গুদাম ও মাদককারবারিদের বৈঠকখানা হিসাবে ব্যবহার হয়েছে এই আস্তানা। রোববার সকালে আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন তরফদার এই তথ্য জানিয়ে বলেছেন শনিবার বিকালে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানের সময় পুলিশ আখাউড়া মনিয়ন্দ জয়পুর গ্রামে এই গোপন আস্তানার সন্ধান পায়।

আখাউড়া থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ আরিফুল আমিন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের মাদকবিরোধী বিশেষ টিম শনিবার বিকালে ৫টায় মাদককারবারি বিল্লালের বাড়িতে তল্লাশী চালায়। তল্লাশীর সময় তার বেডরুমের মেঝেতে রাস্তার ম্যানহোলের মত একটি ঢাকনা দেখে সন্দেহ হয়। ঢাকনা খুলার পর দেখা যায় একটি গোপন সুড়ঙ্গ পথের মুখ। দুইজন পুলিশ সদস্য সুড়ঙ্গ পথে প্রবেশ করে ১০ গজ যেতেই মাটির নিচে পাওয়া যায় মাদকের গোপন আন্ডারগ্রাউন্ড আস্তানা। বিল্লালের এই আলিশান বাড়ির বারান্দা থেকে শুরু করে সব রুম থেকে বাইরে বের হওয়ার গোপন পথ রয়েছে।

তিনি বলেছেন, অভিযানের সময় বিল্লাল কিংবা তার সহযোগী কাউকে পাওয়া যায়নি। টের পেয়ে পালিয়েছে। তবে তার স্ত্রী শেফালী বেগমকে (৩০) পুলিশ ১৫ বোতল ফেন্সিডিল ও ১৫ পিস ইয়াবাসহ আটক করেছে।

এদিকে রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, আখাউড়ার শীর্ষ মাদক বিক্রেতা বিল্লাল মনিয়ন্দের জয়পুরে রাজকীয় বাড়ি নির্মান করেছেন। স্থানীয়রা জানায়, কয়েক বছর আগেও বিল্লাল ছিল গ্রামের অসহায় হতদরিদ্র মানুষ। ফেন্সিডিল ও ইয়াবা ব্যবসা করে বর্তমানে কোটিপতি বনেগেছে বিল্লাল। বিল্লালের বাড়িতে উপজেলার আরেক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী নোয়াখাইল্লা সুমনসহ কয়েকজন শীর্ষ মাদককারবারি নিয়মিত আসা যাওয়া করে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাদের আড্ডা। এই বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ডসহ স্থানে স্থানে তল্লাশী করলে মাদকের অনেক গোপন তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে স্থানীয়দের অভিমত।

এ ব্যপারে আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন তরফদার জানায়, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। প্রয়োজনে পাতাল থেকে তাদের তুলে আনবে পুলিশ। যারা মাদক বিক্রেতাদের পক্ষে থানায় সুপারিশ করতে আসবে তাদেরকেও মাদক মামলায় জেলে পাঠানো হবে বলে তিনি জানান।

আরো দেখনু : অভিযানে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা লাপাত্তা

মাদক বিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের ফলে মাদক ব্যবসায়ীরা লাপাত্তা হওয়ায় মাদকসেবীরাও তাদের খুঁজে পাচ্ছে না। দিনাজপুর জেলার চিহ্নিত মাদকসেবী হন্যে হয়ে খুঁজছে মাদক ব্যবসায়ীদের। এদিকে গত ২৪ দিনে দিনাজপুর জেলা পুলিশের অভিযানে ধরা পড়েছে ৫৭৩ জন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী এবং এ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৪৭৭টি। এছাড়াও মাদক বিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত কথিত বন্দুক যুদ্ধে মারা গেছে ৫ জন এবং গুলিতে পা হারিয়েছে ২ জন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভারত সীমান্ত বেষ্টিত দিনাজপুর জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত দেড় শতাধিক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। গত ১৬ মে থেকে সারাদেশের ন্যায় দিনাজপুরেও শুরু হয়েছে মাদক বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান। এই অভিযান চলাকালীন দিনাজপুর জেলায় কথিত বন্দুক যুদ্ধে ৫ জন মাদক ব্যবসায়ী মারা গেছে। আর গুলিতে পা হারিয়েছে ২ জন। আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সাঁড়াশী অভিযান আর ক্রসফায়ার আতঙ্কে ইতিমধ্যেই আত্মগোপন করেছে এই দেড় শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী। স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন করে কারাবরন করেছে দিনাজপুর শহরের কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী সুফিয়া বেগমসহ বেশ কিছু চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মগোপনে যাওয়ায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে মাদক সেবীরা। একদিকে পুলিশ খুঁজছে তাদের গ্রেফতারের জন্য, আর অন্য দিকে মাদক সেবীরা খুঁজছে মাদক পাবার জন্য। যাদের একদিনেও মাদক ছাড়া চলে না, এমন মাদকাসক্তরা জানান, ভাই হন্যে হয়ে খুঁজছি-কিন্তু মাদক মিলছে না। যাদের কাছ থাকে কিনতাম তাদের খুঁজে পাচ্ছি না।

দিনাজপুর শহরের এক মাদকাসক্ত যুবক জানান, শহরের হঠাৎপাড়া, লাইনপাড়া, হাড্ডিপট্টি, চাউলিয়াপট্টি, বালুবাড়ী ঢাকাইয়াপট্টি, লম্বাপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে যেখান থেকে নিয়মিত মাদক সংগ্রহ করতাম, এসব স্থানে বেশ কয়েকদিন থেকে হন্যে হয়ে খুঁজেও মাদক পাচ্ছি না। হাত-পা জড়ো হয়ে আসছে। চরম বিপদে আছি। এসব কথা বলতেও পারছিনা। একসময় সহজলভ্যতার কারনেই এই মাদক গ্রহনের অভ্যাস করেছি। তখন এই অবস্থা থাকলে কখনোই মাদক গ্রহনের অভ্যাস হতো না।

দিনাজপুরের পুলিশ সুপার হামিদুল আলম জানান, গত ১৬ মে থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত দিনাজপুর জেলায় মাদক বিরোধী অভিযানে মোট গ্রেফতার হয়েছে ৫৭৩ জন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী এবং এ বিষয়ে মামলা দায়ের হয়েছে মোট ৪৭৭টি।তিনি জানান, চলতি বছরের জানুয়ারী মাস থেকে এ পর্যন্ত দিনাজপুরে মাদক বিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে মোট ৩ হাজার ২৪৪ জন এবং মামলা হয়েছে মোট ২ হাজার ৪৫২টি।

তিনি আরো জানান, দিনাজপুর জেলায় মোট চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী প্রায় ১৫০ জন। এদের অনেকেই আত্মগোপনে গেছে এবং কেউ কেউ আত্মসমর্পন করে কারাবরণ করেছে। মাদককে নির্মুল না করা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। দিনাজপুর সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ জানান, মাদকের বিরুদ্ধে এই অভিযান অব্যাহত থাকলে ধীরে ধীরে সমাজ থেকে মাদক নির্মুল সম্ভব হবে।