মাদকবিরোধী অভিযান, বন্দুকযুদ্ধকে বিএনপি নেতার সাধুবাদ

বিএনপির পক্ষ থেকে চলমান মাদকবিরোধী অভিযান আর কথিত বন্দুকযুদ্ধের তীব্র সমালোচনা করা হলেও দলের একজন সাবেক সংসদ সদস্য সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন এই অভিযান আরও আগেই শুরু হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দেরি হলেও অভিযান শুরু হওয়ায় তিনি খুশি।
মাদক বিক্রেতাদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই বলেও মনে করেন ওই সাবেক আইন প্রণেতা। বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অস্ত্র-গোলাবারুদ দেয়া হয় তা ব্যবহার করার জন্যই।

বন্দুকযুদ্ধে প্রাণহানির সমালোচনাকারী মানবাধিকার কর্মীরা প্রকারান্তকে মাদক কারবারিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন বলেও সমালোচনা করেন তিনি। বলেছেন, মাদকের কারবারিদের মেরে ফেলা ছাড়া উপায় নেই।
শনিবার রাজধানীর ইস্কাটনের বিজ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন কিশোরগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির দুইবারের সংবাদ সদস্য আখতারুজ্জামান।

টেলিভিশন টকশো উপস্থাপক জিল্লুল রহমানের সঞ্চালনায় বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বর্তমান সংসদ সদস্য, বিএনপির সাবেক দুই সংসদ সদস্য ছাড়াও ব্যবসায়ী, কলামিস্ট, সম্পাদক, শিক্ষক, চিকিৎসকরা অংশ নেন।

গত ৪ মে থেকে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানে দেড়শরও বেশি প্রাণহানি হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র। এই অভিযানে বন্দুকের ব্যবহারের তীব্র সমালোচনা করছে বিএনপি। তাদের দাবি, সন্দেহভাজনদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে বন্দুকযুদ্ধের দাবি করেছে, তা বিশ্বাস করছে না বিএনপি।

হাইকোর্টে রিট আবেদনে আটকে যাওয়া ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে বিএনপির এই মনোনয়নপ্রত্যাশী জানান, তিনি এমন অভিযান চালাতে বারবার নানা সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কথা শুরু করেছিলাম। পরে ক্ষমতায় না আসা হলেও বার বার সরকারের কাছে দাবি করে আসছিলাম মাদক নিয়ে অভিযানের। আমাদের প্রত্যাশা ছিল সরকার কাজটি করবে। তবে সেটা করতে সরকার বেশি সময় নিয়ে নিয়েছে।’

‘তাই আমরা বলব ভালো কাজ দেরিতে হলেও সমস্যা নেই। মাদকবিরোধী অভিযান আপনার বা সরকার শুরু করেছে তাই সাধুবাদ আর ধন্যবাদ জানাই। এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কাজ।’

মাদক বিক্রেতাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই
বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেই। সে সময় তিন বছরে ৯৫১ জন এভাবে নিহত হয় বলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রর প্রতিবেদন বলছে। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরেও নিহত হয় ৩৫৫ জন। আর বর্তমান সরকারের নয় বছরে গত মে অবধি প্রাণ গেছে ১৬৮৭ জনের।

বন্দুকযুদ্ধে প্রাণহানির সমালোচনা নিয়ে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এটি নিয়ে অনেক হৈইচই চলতেছে। অনেকে অনেক কথা বলছেন। অনেকে মানবাধিকারের কথা বলতেছেন। আমি আজকের বক্তব্য একটু ক্রিটিসাইজ করে লিখে এনেছি। কারণ, কথা বলতে গেলে অনেক সময় আসল কথা বলা হয় না।’

‘বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীরা মারা যাচ্ছে। এই নিয়ে একটি মহল বেশ হইচই শুরু করেছে। তাদের হই চই করার কারণ অযৌক্তিক নয়। তবে মাদকের সর্বনাশা গ্রাসের তুলনায় তা অমানবিক না।’
সাবেক সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘মানুষ যখন অমানুষ হয়ে যায় এবং সেই অমানুষগুলো যখন রাষ্ট্র ও মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর অস্ত্র নিয়ে চড়াও হয়; তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ করা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প থাকে না।’

‘জনগণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়েছে তা ব্যবহার করে রাষ্ট্র ও সমাজের শত্রুদের নোধন করার জন্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। যুদ্ধ প্রথম ঘোষণা করেছে রাষ্ট্র ও সমাজের শত্রুরা। আইন অমান্য করে জনগণকে জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছে মাদক ব্যবসায়ীরা।’

অভিযানে বন্দুকের ব্যবহারকে সমর্থন করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘মাদক অবৈধ ব্যবসা, যার শিকার দেশের লক্ষ কোটি তরুণ এবং তাদের কাছে মাদক পৌঁছে দিয়ে তরুণ সমাজকে তিলে তিলে হত্যা করছে এই ব্যবসায়ীরা। তাই মাদক ব্যবসায়ীদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।’
‘মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যুদ্ধে নামতে বাধ্য হয়েছে। কাজেই এটা আমাদের পরিষ্কার করতে হবে।’

বন্দুকযুদ্ধের মতো সড়ক দুর্ঘটনাও মানুষ মারা যাচ্ছে উল্লেখ করেন আখতারুজ্জামান। বলেন, ‘আজ সকালে জানতে পারলাম সাতকানিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই জন মারা গেছে। আবার জানতে পারলাম মাদকবিরোধী অভিযানে একজন মারা গেছে। মোট তিনজন আজ মারা গেলেন। ওই দুই জন নিরপরাধ লোক মারা গেল তাদের বিষয় আগে দেখব নাকি যে একজন মাদক ব্যবসায়ী মারা গেল তাকে নিয়ে হৈ চৈ করব?’

‘যদি মাদক ব্যবসায়ীদের মৃত্যুতে হৈচৈ করে উঠি তাহলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল ওই দুই ব্যক্তির জন্য দায়ী কে? সেটার জন্য কি আসাদ ভাই (আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল) কে দায়ী করতে হবে?’
‘তাই বলতে চাই মৃত্যুর প্রয়োজন আছে। যারা সমাজের অমানুষ, যারা সমাজের ক্ষতি করছে তাদের বেঁচে থাকার অধিবার অধিকার নেই।’
‘প্রচলিত আইনে বিচার সম্ভব নয়’

মাদকের কারবারিদেরকে প্রচলিত আইনে বিচারের দাবি পূরণ হওয়ার নয় বলেও মনে করেন সাবেক এই আইন প্রণেতা। বলেন, ‘অনেকে ফেসবুকে পোস্ট করেছে কথিত বন্দুকযুদ্ধে যারা মারা গেছে তাদের না মেরে আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিত বা করতে হবে। তাদের সাথে আমিও একমত, তবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে গেলে সাক্ষী সাবতের প্রয়োজন হয়। যা পাওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব।’

‘এই জন্য কখনও মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আনা যাবে না। তার মানে মাদক ব্যবসায়ীদের কখনও দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে না।’

‘তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে, যারা মানবাধিকারের কথা বলে মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের কথা বলেন তারা প্রক্ষান্তরে মাদক ব্যবসায়ীদের পক্ষেই কথা বলছেন।’