আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ২২ হাজার ৫২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরও ২০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই পরিকল্পনার কথা জানান।
আগামী অর্থবছরে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলে জাতীয় বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বিপরীতে ২৪ হাজার ৯২১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। চলতি অর্থবছরে এই বরাদ্দ ২৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন দেশের প্রায় ৯২ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করি এবং ৯০ শতাংশ পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ পায়। শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ- এ স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা বিদ্যুৎ সংযোগের পরিধি আরও সম্প্রসারণ করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াট হতে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা আমাদের লক্ষ্য।’
বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা পর্যায়ক্রমে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার প্রত্যাশা রয়েছে বলেও জনান মন্ত্রী।
উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে বর্তমানে ১৫ হাজার ২০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এছাড়া ৪ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। নিকট ভবিষ্যতে ২২ হাজার ৫২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরও ২০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা আছে।’
নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি পুরাতন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সংরক্ষণ, মেরামত ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মহেশখালীতে ১০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ব্যক্তিমালিকানা খাতে দেশি ও বিদেশি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে মুহিত বলেন, ‘কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়াকে পরিবেশবান্ধব করার উদ্দেশ্যে আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনকালে বনায়নসহ ঠান্ডা পানির সরবরাহ ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণীয় বর্জ্য নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের সর্বাধুনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
রূপপুরে বাস্তবায়নাধীন ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রথম পর্যায়ের কাজ চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ সমাপ্ত হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কৌশলের অংশ হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন মোট উৎপাদনের ২০ শতাংশে উন্নীত করতে চাই। আমাদের সাফল্য হচ্ছে বিপুল সংখ্যক সোলার হোম স্থাপন। এগুলোকে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ, নতুন ভবনে সোলার প্যানেলের বাধ্যতামূলক সংস্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাদে সৌর-বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ আনতে আলোচনা চলছে
ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য ত্রি-দেশীয় সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে মুহিত বলেন, ‘ভুটানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা বিনিয়োগ পরিকল্পনা করেছি। এছাড়া নেপাল, মিয়ানমার ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে আলোচনা চলমান আছে।’
২০২১ সালের মধ্যে আরও ২১ হাজার কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন এবং বিতরণ লাইনের পরিমাণ মোট ৪ লাখ ৭৮ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে ১০৮টি কূপ খননের পরিকল্পনা সামনে রেখে বাপেক্স সার্বিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।’
প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা এলপিজির মাধ্যমে প্রতিস্থাপনে বিভিন্ন কোম্পানিকে ২৪ লাখ ৪৪ হাজার ৭৬৬টি এলপিজি সিলিন্ডার আমদানি ও মজুদের অনুমোদন দেয়া হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে মহেশখালীতে একটি ভাসমান সংরক্ষণাগার ও পুনঃগ্যাসায়ন ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। অপর একটি ইউনিট শিগগিরই স্থাপন করা সম্ভব হবে।’
‘এর মাধ্যমে চলতি বছরের জুন মাস হতে ৫০০ এমএমসিএফডি (মিলিয়ন কিউবিক ফিট পার ডে) এবং অক্টোবর ২০১৮ নাগাদ আরও ৫০০ এমএমসিএফডি পরিমাণ এলএনজি পাইপলাইনে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। পর্যায়ক্রমে কক্সবাজারের মহেশখালী এবং পটুয়াখালীর পায়রাতে দুটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা আছে।’
বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমানো, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায় ও লোড ম্যানেজমেন্টের জন্য ২০২১ সালের মধ্যে ২ কোটি প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জ্বালানির ব্যবহার ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ কমানো।’