আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সারা দেশে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ৯০৪টি বাস চলবে। এর মধ্যে ৪৭৫টি বাস ঢাকা থেকে চলবে। ৩৭৫টি বাস ঢাকার বাইরে থেকে বিভিন্ন জেলায় উপজেলায় চলবে। এদিকে আজ মঙ্গলবার থেকে ঈদের টিকিট বিক্রি শুরু হবে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ‘ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের’ টিকিট বিআরটিসির বিভিন্ন বাস ডিপোর সামনে থেকে দেওয়া হবে। গতকাল সোমবার সকালে বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়ে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা মহানগরীর ৬টি বাস ডিপোসহ গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের ৮টি ডিপো হতে মোট ৪৭৫টি বাস প্রতিদিন বিভিন্ন গন্তেব্যের উদ্দেশ্যে ছাড়বে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ১১টি ডিপো থেকে আন্তঃজেলার মধ্যে ৩৭৫টি বাস চলাচল করবে। এছাড়া জরুরি প্রয়োজন মেটাতে সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলীসহ ঢাকার সাতটি স্থানে ৫৪টি বাস স্ট্যান্ডবাই থাকবে। কোথাও কোনো বাস বিকল বা দুর্ঘটনায় পড়লে সেখানে ওই সব বাস দেওয়া হবে। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, অন্যান্য বাস থেকে এই বাসের তুলনামূলক ভাড়া কম বলে স্বল্প আয়ের মানুষ বিআরটিসি বাসে সবচেয়ে বেশি চলাচল করেন। বিশেষ করে পোশাককর্মীরা এসব বাসে বেশি যান। অনেক সময় কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকা একই এলাকার মানুষ বিআরটিসির পুরো একটি বাস ভাড়া করেন। তারা এই বাস দিয়ে ঢাকার বাইরে যান, তেমনি আসার সময়ও একই বাস ব্যবহার করেন। তাদের সুবিধার জন্য বিআরটিসি বাস কর্তৃপক্ষ বিশেষ এই ছাড় দিয়ে থাকে।
বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, রাজধানীতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি অফিস ও রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী বাস ঈদের ছুটিতে চলবে না। সেসব বাস বিভিন্ন জেলায় যাবে। ঈদের ছুটি শেষ হলে বাস আবার স্বাভাবিক নিয়মে চলবে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ঈদের দুই দিন আগে থেকে ঢাকা মহানগরীর বিআরটিসির ৬ ডিপো ও গাজীপুর-নারায়ণগঞ্জের ৮ ডিপো থেকে উত্তরবঙ্গগামীসহ বিভিন্ন গন্তব্যের কারখানা শ্রমিকদের পরিবহন সেবা দেওয়া হবে। বাসগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রীর পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া যাতে না নেওয়া হয় সেজন্য বিআরটিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী। একইসঙ্গে বিআরটিসি বাসগুলো যেখানে-সেখানে না থামিয়ে শুধু কাউন্টার থেকে যাত্রীদের উঠানামা করার কথা জানিয়েছেন মন্ত্রী। এজন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার ডিপোতে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের গাফিলতি না করার নির্দেশ দেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি প্রায় বিআরটিসির বাসে উঠে দেখি। বাসের অবস্থা খারাপ। জানালার গ্লাস ভাঙা। অনেক জানালার অর্ধেক আছে, বাকি অর্ধেক নেই। এসব বাস দ্রুত মেরামত করতে বিআরটিসি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন সেতুমন্ত্রী। ঈদে টোলে প্রয়োজনীয় ভাংতি দেওয়ার জন্য বাস-ট্রাকসহ সব গাড়ির ড্রাইভারকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, টোলগুলোতে ভাংতি টাকা না দেওয়ায় অনেক সময় লেগে যায়। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে যাত্রী সেবার লক্ষ্যে ময়মনসিংহ, পঞ্চগড় এবং যাত্রাবাড়ীতে খুব শিগগিরই তিনটি বিআরটিসি বাস চালু করার পাশাপাশি নতুন করে বিদেশ থেকে ৪শ’ নন এসি এবং ২শ’ এসি বাস ও ৬শ’ ট্রাক আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। এছাড়া একটি প্রকল্পের আওতায় আগামী ৫ বছরে ৩ হাজার ৬শ’ ড্রাইভারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ওবায়দুল কাদের সভায় জানান, ভারতীয় ঋণ কর্মসূচির আওতায় চারশত বাস এবং পাঁচশত ট্রাক সংগ্রহের বিষয়টি সম্প্রতি গতি পেয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ নতুন বাস এবং ট্রাক বিআরটিসি’র বহরে যুক্ত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া আরো দুইশত বাস সংগ্রহ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অনুষ্ঠানে বিআরটিসি চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এহসান ই এলাহী, বিআরটিসি পরিচালক (প্রশাসক) হামিদুর রহমানসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ডস্থ বড়দারোগাহাটে যানবাহনের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে স্থাপিত ওজন স্কেলটি পুনরায় চালু হবে। গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় এ মহাসড়কের সুরক্ষায় সকলের সহযোগিতা কামনা করছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।