সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে গত এক বছরে বাংলাদেশিদের অর্থ আমানতের পরিমাণ নজিরবিহীন হ্রাস পেয়েছে। ২০২২ সালে দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানত কমে সাড়ে পাঁচ কোটি ফ্রাঁ হয়েছে; যা তার আগের বছরেও ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানতের হার ২০২১ সালের তুলনায় ৯৩ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৫২ লাখ ফ্রাঁ। প্রতি ফ্রাঁ ১২১ টাকা ধরলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৬৬৮ কোটি টাকা।
তবে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের ব্যক্তি পর্যায়ের আমানতের পরিমাণ ২০২১ সালের ২৬ দশমিক ৩ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৩৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন ফ্রাঁ হয়েছে। অর্থাৎ ব্যক্তি পর্যায়ের আমানতের হার ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪৮ কোটি টাকার বেশি হয়েছে।
২০২২ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো থেকে সুইস ব্যাংকে জমার পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ। যা এক বছর আগেও ছিল ৮৪৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন ফ্রাঁ। বাংলাদেশি ব্যাংকের রাখা আমানতে ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ পতন হওয়ায় সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের মোট আমানত কমেছে।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ৮৭২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে পৌঁছায়। যা দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ জমা।
তবে ২০২০ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ তার আগের বছরের তুলনায় কম ছিল। ওই বছর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ হাজার ২০৩ কোটি টাকার বেশি।
তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্রাঁ। ২০১৮ সালে এই অর্থের পরিমাণ ছিল ৬২ কোটি সুইস ফ্রাঁ। আর ২০১৭ সালে এর পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ।
এদিকে, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে অর্থ আমানতের হারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে ভারত। গত বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ২ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার পরও ভারতীয়দের আমানত দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ফ্রাঁতে।
সুইস ব্যাংকে মোট আমানতের হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম স্থানে রয়েছে। যদিও গত বছর বাংলাদেশ থেকে সুইস ব্যাংকে বার্ষিক আমানত হ্রাসের হার সবচেয়ে বেশি (৯৩.৭ শতাংশ)। আমানত হ্রাসের হারে বাংলাদেশের পরই আছে আফগানিস্তান (৭৭.৫ শতাংশ) এবং পাকিস্তান (৪৫ শতাংশ)।
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সুইস ব্যাংকে আমানত সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে নেপালের। দেশটির আমানত প্রায় ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮২ মিলিয়ন ফ্রাঁ হয়েছে। আর মালদ্বীপের নাগরিকদের আমানত ৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন এবং শ্রীলঙ্কার ৬৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন ফ্রাঁতে দাঁড়িয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ‘মোট দায়ের’ মধ্যে ব্যক্তিগত, ব্যাংক এবং অন্যান্য উদ্যোগের আমানতসহ সব ধরনের তহবিল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মানুষ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বৈধ-অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ গচ্ছিত রাখেন। দেশটির কঠোর গোপনীয় ব্যাংকিং নীতির কারণে সারা দুনিয়ার মানুষ সেখানে অর্থ জমা রাখেন।
সুইজারল্যান্ডের আইনে গ্রাহকদের গোপনীয়তা দৃঢ়ভাবে রক্ষার নিয়ম রয়েছে। এ আইনের ফলে দেশটির ব্যাংকগুলো কোনো পরিস্থিতিতেই গ্রাহকদের তথ্য কারও কাছে প্রকাশে বাধ্য নয়। ফলে কারা, কেন অথবা কীভাবে অর্থ ব্যাংকে রাখছেন, সে সম্পর্কে ব্যাংকগুলো কাউকে কোনো তথ্য দেয় না।