তার (স্ত্রী) যে দেনা-পাওনা ছিল সব পরিশোধ করে দিয়েছি। দেনমোহর ছিল ৭০ হাজার। আর খোরপোষ আরও ১৫ হাজার মিলে ৮৫ হাজার টাকায় তাকে ছেড়ে (তালাক) দিয়েছি। এরপর থেকে তার সাথে আর আমার যোগাযোগ নেই। একসাথে ১০ বছর সংসার করেছি। কিন্তু সন্তান হয়নি। তার সাথে কোনো হিসাব ও লেনদেন নেই। সেও আলাদা, আমিও আলাদা। আমার একটাই অপরাধ। ওর (মৌসুমী) স্বামী আমি।
বুধবার রাজশাহীতে মানবপাচার অপরাধ ট্রাইবুনালের বারান্দায় স্ত্রী মৌসুমী বেগমকে উদ্দেশ করে কথাগুলো বলছিলেন আসামি সজীব আহম্মেদ (২৯)।
২০২১ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নবজাতক চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সজীব ও মৌসুমী দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। তাদের বিচ্ছেদ হলেও নবজাতক চুরির মামলায় তারা দুজনেই আসামি।
ওই মামলায় রায়ে গতকাল সজীব আহম্মেদের পাঁচ বছর ও মৌসুমী বেগমের ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন মানবপাচার অপরাধ ট্রাইবুনালের বিচারক আয়েজ উদ্দিন।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে তাদের আদালতে নেওয়া হয়। দু’জনে বারান্দার দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময়ে কেউ কারো সাথে কথা না বললেও তারা দু’জনেই কেঁদেছেন।
মৌসুমী আদালতের বারান্দাতেই কাঁদলেও সজীব কেঁদেছেন মানুষের আড়ালে, ছয়তলার ওপরে বন্ধ সিঁড়িতে। তবে রায় ঘোষণার সময়ে কাঠগড়ায় দু’জনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তদের দু’জনকে আদালত থেকে পুলিশ বের করে কাস্টডিতে নিয়ে যায়।
এই মামলার প্রধান আসামি মৌসুমী বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, আর কী আপনারা প্রচার করতে চান? দেশবাসীকে আর কী জানাতে চান আপনারা? যেটা লেখা ছিল সেটা হয়ে গেছে আমাদের… ভাগ্যে লেখা ছিল। কপালের লিখন তো আর খণ্ডানো যায় না।
আসামি সজীব আহম্মেদ দাবি করেন, বাচ্চা চুরির বিষয়ে তিনি কিছু জানতেন না। মৌসুমী নিজের ইচ্ছেতেই সব করেছে। ঘটনার দিনে আমি নিজের কাজে স্থানীয় কাউন্সিলরের রুমে ব্যস্ত ছিলাম। কী থেকে কী হয়ে গেল কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। পুলিশ এসে আমাকে আর ওকে (স্ত্রী) শিশুসহ ধরে নিয়ে যায়। এরপরে ছয় মাস হাজতে ছিলাম, সেও ছিল। হাজত থেকে বের হওয়ার কিছুদিন পরে তাকে (স্ত্রী) তালাক দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, তালাকের পরে তার সাথে আমার আর কোনো যোগাযোগ ছিল না। আগে দু’জনের একজন আইনজীবী ছিল। আমাদের বিচ্ছেদ হওয়ার পরে সে আলাদা আইনজীবী নিয়েছে। আমিও আলাদা আইনজীবী নিয়েছি মামলা পরিচালনার কাজে। পুলিশে ধরে নিয়ে আসার পরে আমার চাকরি চলে যায়।
মানবপাচার অপরাধ ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শফিকুল ইসলাম জানান, এটি একটা চাঞ্চল্যকর মামলা। ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি শ্রী মাসুম রবির স্ত্রী সন্তান জন্ম দেন। এই মামলার আসামি মৌসুমী কৌশলে ওই নবজাককে চুরি করে। পরে মামলা হলে সিসি টিভি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে পুলিশ অভিযান চালিয়ে নগরীর তালাইমারী রাণীনগর এলাকার একটা বস্তি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। এসময় মৌসুমী ও তার স্বামী সজীবকে আটক করে পুলিশ।