‘আমি সেলিব্রিটি না, তবুও আমার সঙ্গে নেইমারের ব্যবহারে বৈষম্য নেই’

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের যুবক রবিন মিয়া। কাজের সন্ধানে বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ব্রাজিলে গিয়ে পরিচয় হয় এ সময়ের জনপ্রিয় তারকা ফুটবলার নেইমার দা সিলভা সান্তোস জুনিয়রের সঙ্গে। সেই পরিচয় থেকে গভীর বন্ধুত্ব হয় নেইমার ও রবিনের। বর্তমানে নেইমারের পাবলিসিটি দেখভাল করেন রবিন মিয়া।

গত ১৫ নভেম্বর রবিনের চার বছর বয়সী ছেলে রেদোয়ানের জন্মদিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভিডিও বার্তা দেন নেইমার। ওই ভিডিওতে নেইমারের পাশে রবিনকে দেখা যায়। এরপর থেকে তাদের বন্ধুত্ব আলোচনায় উঠে আসে।

রবিন মিয়া কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার কালিকা প্রাসাদ ইউনিয়নের গাজীরটেক গ্রামের মোল্লা বাড়ির হাজি আব্দুস সাত্তারের ছোট ছেলে। আব্দুস ছাত্তার ও জাহানারা বেগম দম্পতির সাত সন্তান। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। তিনিসহ ব্রাজিলে থাকেন তার বড় ভাই হুমায়ুন কবির ও রাসেল মিয়া। দেশে থাকেন মেজো ছেলে মামুন মিয়া। রবিন ১৫ বছর ধরে ব্রাজিলে রয়েছেন। বর্তমানে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়েই ব্রাজিলে রয়েছেন। সেখানে যুক্ত রয়েছেন কৃষি ব্যবসার সঙ্গে।

জানা গেছে, ব্রাজিলে জোয়ান সেলসোর নামের ব্রাজিলের এক ব্যক্তির সঙ্গে রবিনের পরিচয় হয়। জোয়ান সেলসোর নেইমারের বন্ধু। পরে তার মাধ্যমে নেইমারের সঙ্গে রবিনের পরিচয় হয়। যেটা গড়িয়েছে দারুণ বন্ধুত্বের সম্পর্কে। বর্তমানে রবিন ও জোয়ান সেলসোর নেইমারের প্রচারণার কাজে যুক্ত আছেন।

রবিনের বাংলাদেশের প্রতিবেশী আবুল কালাম ঢাকা পোস্টকে জানান, রবিন মিয়া খুব ভালো ছেলে। তিনি ব্রাজিলিয়ন সুপারস্টার নেইমারের সঙ্গে কাজ করেন ও তার বন্ধু। সেটা জেনে এলাকাবাসী সবাই আনন্দিত।

রবিন মিয়ার মেজো ভাই মামুন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা চার ভাই। তার মধ্যে আমি বাদে রবিনসহ তিনজন ব্রাজিলে পরিবারসহ থাকেন। আমি দেশে ব্যবসা দেখাশোনা করি। আগে বাবা ব্যবসা করতো তার বয়স হওয়া তা আমি করি। মায়ের অসুস্থতার খবরে বিশ্বকাপের ব্যস্ততা রেখেই রবিন শুক্রবার ভোরে দেশে এসেছেন। শনিবার রাতেই চলে যাওয়ার কথা রয়েছে। তারকা ফুটবলার নেইমারের সঙ্গে আমার ছোট ভাইয়ের বন্ধুত্ব রয়েছে এতে আমাদের গর্ব হয়।

কীভাবে পরিচয় হলো নেইমারের সঙ্গে প্রশ্নের জবাবে রবিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ব্রাজিলে জোয়ান সেনসু নামে এক ব্যক্তি নেইমারের খুব কাছের। তিনি আবার আমার বন্ধু। সেনসুই প্রথমে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন তার সঙ্গে। এরপর থেকে নেইমারের সঙ্গে কাজ ও বন্ধুত্ব শুরু।’

তিনি বলেন, ‘নেইমারের ফেসভ্যালু ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক মানের কোম্পানি বা ব্র্যান্ড ব্যবসার প্রচার ও প্রসার চায়। তারা সেই কাজের জন্য আমাদের কাছে আসে। আমরা সেখান থেকে খুঁজে বের করে পছন্দসই কোম্পানিকে নেইমারের পক্ষে প্রস্তাব পাঠাই। এ কাজটি আমি ও সেনসু করি।’

বাংলাদেশ সম্পর্কে কতটুকু জানেন ব্রাজিলের পোস্টার বয় খ্যাত এই ফুটবল তারকা- এ প্রশ্নের জবাবে রবিন বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালোভাবেই নেইমারের জানা আছে। এ দেশে তার অসংখ্য ফ্যান-ফলোয়ার রয়েছে। ব্রাজিলের একটি ইন্টারনেট সাইটে নেইমারের ফ্যান সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। সেখানে ব্রাজিলের পরেই বাংলাদেশি ফ্যানদের অবস্থান।’

কাজের সুবাদে নেইমারের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক- এ জবাবে তিনি বলেন, আসলে আপনারা তাকে খেলোয়াড় হিসেবে দেখেন। আমি দেখি, আমার একজন ফুটবল খেলোয়াড় বন্ধু হিসেবে। মানুষ হিসেবে নেইমার খুবই ভালো। আমি কোনো সেলিব্রিটি না। আমি বাংলাদেশি, আমি কোনো ফুটবলারও না। ধনী পরিবার থেকেও উঠে আসিনি আমি। কিন্তু আমার সঙ্গে নেইমারের ব্যবহারে কোনো বৈষম্য থাকে না। সবার মতোই নেইমার ও তার পরিবার আমার সঙ্গে মেশে। আমরা এক সঙ্গে কার্ড খেলি, এক সঙ্গে খাবার খাই।নেইমারকে বাংলাদেশে আনতে চান তিনি।