পরিবার ও সমাজ থেকে ৩ বছর আগে বিচ্যুত হয় তানজিলা ও বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী সৃষ্টির। পরে তাদের আশ্রয় হয় বরিশালের সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। এবার তাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে এই কেন্দ্রেই।
কোনো কিছুর কমতি না থাকা জাঁকজমকপূর্ন এই আয়োজনে তিন লক্ষ টাকা করে দেনমোহরে বিয়ে হয়েছে তাদের।
শনিবার দুপুরে তাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার দক্ষিণ মোড়াকাঠি গ্রামের বাসিন্দা ওবায়দুর মৃধার সঙ্গে বিয়ে হয় সৃষ্টির৷
অন্যদিকে তানজিলার সাথে বিয়ে হয়েছে বাকপ্রতিবন্ধী আগৈলঝাড়া উপজেলার নগরবাড়ি গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম সরদারের সাথে। পারিবারিকভাবেই বিয়েতে সম্মতি দেওয়া হয়েছে।
রেজাউল করিম সরদারের ভাই মো: ফরিদ বলেন, পারিবারিক ভাবেই পছন্দ করা হয়েছে তানজিলাকে। দুজন দুজনকে পছন্দ করার পরই আমরা বিয়ের আলাপ শুরু করি।
রেজাউলের বোন চায়না আক্তার বলেন, আমরা এই বিয়ে নিয়ে সবাই খুশি। আমার ভাইয়ের সুখের সংসারই হবে।
বিয়ের আয়োজন নিয়ে সন্তুষ্ট তানজিলা ও সৃষ্টি। সবার প্রতি কৃতজ্ঞ তারা।
আবেগাপ্লুত তানজিলা আক্তার বলেন, আমাদের বিয়ে যে এমনভাবে হবে সেটা কখনো প্রত্যাশা করিনি। আমরা অনেক আনন্দিত ও খুশি।
তানজিলা ও সৃষ্টির উকিল বাবা হয়েছেন সমাজসেবা দপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ।
বিয়ের আয়োজন নিয়ে তিনি বলেন, ৩ লক্ষ টাকা করে দেন মোহরে ১৯ বছর বয়সী তানজিলা ও সৃষ্টির বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। ওরা যেন সুখে শান্তিতে থাকে সেজন্য উপহারও দেওয়া হয়েছে। গায়ে হলুদ, মেহেদি পড়া থেকে শুরু করে নিজের মেয়ের বিয়েটা যেমন ভাবে আয়োজন করা যায়, সেভাবেই সব করা হয়েছে।
অন্যদিকে দুইজনের বিয়েকে ঘিরে সাজসাজ রব ও আনন্দঘন পরিবেশ ছিলো পুনর্বাসন কেন্দ্রে। গান বাজনা থেকে শুরু করে কোনো কিছুরই কমতি ছিলো না এখানে। বরযাত্রী সহ আয়োজন ছিলো ৩০০ লোকের খাবারেরও।
পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দা ফাল্গুনী বলেন, তিনদিন আগে থেকেই আমরা নানা আয়োজনে মজা আনন্দ করেছি।
বরিশাল মেট্রোপলিটনের কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, এই ধরনের আয়োজনে সকলকে পাশে এসে দাঁড়ানো ও সহযোগতিার হাত বাড়ানো উচিত। এরা সমাজের অংশ, সমাজ থেকে বিচ্যুত নয় বলে মনে করি।
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, তানজিলা ও সৃষ্টি ডিসির মেয়ে। এই নিয়ে চারজন মেয়েকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকলে এগিয়ে আসলে এখানের ৩৫ জন মেয়ের জীবন নির্বিঘ্ন হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম বলেন, এই কেন্দ্রের সামনে সামাজিক প্রতিবন্ধী লেখা থাকলেও এরা সামাজিক প্রতিবন্ধী নয়। এদের সমাজ গ্রহণ করে না, তবে সমাজকে এদের সহজ ভাবে নিতে হবে।
রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সাথে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট এর কর কমিশনার তাসনিমা হোসেন লুনা, কর কমিশনার কাজী লতিফুর রহমান, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন, ভোলার জেলা প্রশাসক তৌফিক -ই-লাহী চৌধুরী ও পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান,জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আল মামুন তালুকুদার, বরিশাল সদর উপজেলার চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, বিসিবির পরিচালক আলমগীর হোসেন আলো প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।