ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবের মাঝে জন্ম নেওয়া জান্নাতুল ফেরদৌস সিত্রাং এর বাড়িতে গেলেন নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান। এসময় তিনি খাদ্য ও নগদ অর্থ পরিবারের হাতে তুলে দেন। পাশাপাশি সে যতদিন বেঁচে থাকবে তার খোঁজখবর নেবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে হাতিয়া উপজেলার হরণী ইউনিয়নের চতলার খাল এলাকার শিশুর বাড়িতে পৌঁছান তিনি। এ সময় জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমানকে পাশে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন জান্নাতুল ফেরদৌস সিত্রাং এর পরিবার ও আশপাশের মানুষজন।
সিত্রাং এর মা ফারজানা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলা প্রশাসক স্যার আমাদের বাড়িতে আসবেন তা স্বপ্নেও ভাবি নাই। আমার মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নগদ টাকা ও খাদ্য দিয়েছেন। আমরা সবাই স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ
সিত্রাং এর দাদি নুর জাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিসি স্যার এই গরিবের বাড়িতে পা দিয়েছেন। আমরা এতেই খুশি। আমাদের খাবার দিয়েছেন এবং নগদ টাকা দিয়েছেন। এছাড়াও ইউএনও স্যারসহ চেয়ারম্যান ছিলেন। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষা আমাদের নেই।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সেলিম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন সংগ্রামী মা ফারজানা আক্তার। তিনি যে কঠিন দুর্যোগের সময়ে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন তা অকল্পনীয়। সেই জন্য আজ জেলা প্রশাসক স্যারসহ আমরা এই কন্যা সন্তানকে দেখতে এসেছি।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে যখন জোয়ারে ঘর ডুবে যায়। এই সংগ্রামী নারী তখন চৌকিতে আশ্রয় নেয়। সেই সময় নেটওয়ার্কসহ সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। তার স্বামীও এলাকায় ছিল না। চৌকিতেই সাধারণভাবে ধাত্রীর সহযোগিতায় কন্যা শিশু প্রসব করেন তিনি। ঘূর্ণিঝড়ের নাম অনুযায়ী শিশুটির নামকরণ করেন সিত্রাং।
তিনি আরও বলেন, সিত্রাং এর দায়িত্ব আমি নিলাম। তার জন্য আমি নতুন জামা মিষ্টিসহ উপহার এনেছি। এছাড়াও নগদ টাকা তার মায়ের হাতে তুলে দিয়েছি। ইউএনও ও স্থানীয় চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছি। যেকোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাতে বলেছি।
মুজিববর্ষের ঘর দেওয়া হবে উল্লেখ করে দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, যেহেতু পরিবারটি বেড়িবাঁধের কাছে থাকে। নদী গর্ভে তাদের ভিটে চলে গেছে তাই তাদেরকে মুজিববর্ষের ঘর উপহার দেব। গৃহহীন পরিবারগুলোকে গৃহ প্রদানসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন পূরণে আমরা কাজ করছি।
এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসরাত সাদমীন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সেলিম হোসেন, হরণী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আখতার হোসাইনসহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত রোববার (২৩ অক্টোবর) নোয়াখালীতে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত চলাকালে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নের বয়ারচর এলাকার মো. শরিফ উদ্দিনের স্ত্রী ফারজানা আক্তার কন্যা শিশু প্রসব করেন। পরক্ষণেই শিশুটির নাম রাখা হয় জান্নাতুল ফেরদৌস সিত্রাং।