আমার মা নিখোঁজ হননি : রহিমার মেয়ে আদুরী

খুলনার আলোচিত নারী রহিমা বেগম (৫২) আবার নিখোঁজ হয়েছেন বলে খবর শোনা যাচ্ছে। তবে তার মেয়ে আদুরী বেগমের দাবি- তার মা নিখোঁজ হননি। বাড়িতেই আছেন।

সোমবার (১৭ অক্টোবর) রাতে মুঠোফোনে আদুরী বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মা নিখোঁজ হননি। এটা মিথ্যা কথা। আমার মা কি মার্ডার কেসের আসামি? না আমরা মার্ডার কেসের আসামি? সে (মা) কোথাও যেতে পারে না? আমি তো কোথাও ডায়েরি করিনি আমার মা নিখোঁজ হয়েছে? একপর্যায়ে তিনি এই প্রতিবেদককে সকালে তাদের বাড়িতে যাওয়ার দাওয়াত দেন।

রহিমা বেগমের আরেক মেয়ে মরিয়ম মান্নান বলেন, আমি ঢাকায় রয়েছি। মায়ের ফের নিখোঁজের বিষয়ে কিছু জানি না। এ বিষয়ে আমার ভাই মিরাজ অথবা বোন আদুরীর কথা বলতে পারেন।

এদিকে মা রহিমা বেগমের বিরুদ্ধে অপহরণের নাটক সাজানোর অভিযোগ করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ছেলে মোহাম্মদ মিরাজ আল শাদী।

খুলনা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকে রহিমা বেগমের ছেলে কার্যালয়ে এসেছিলেন। তিনি স্বেচ্ছায় বলেন-‘আমি একটি জবানবন্দি দিতে চাই। আমার মা যাদেরকে পেঁচিয়ে বা জমিজমা সংক্রান্ত যে বিরোধে আত্মগোপনের কথা বলেছিলেন, এতে তাদের কোনো হাত নেই। তারা জড়িত না, নির্দোষ।’ পরে আমরা তখন তাকে আদালতে পাঠিয়ে দেই। আদালতে তিনি জবানবন্দি দিয়েছেন।

সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, মিরাজ বলেছেন- তার মা আত্মগোপন করেছিলেন। এর আগেও একাধিকবার তিনি এ রকম ঘটনা ঘটিয়েছেন। পারিবারিক বিষয় তার বাবার সঙ্গে ঝগড়া করেন। আর এবার জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধীদেরকে ফাঁসানোর জন্য তিনি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গেছেন। তার আত্মগোপনের সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি (মিরাজ) মহেশ্বরপাশায় গিয়ে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের সবাইকে যার যার বাসায় দেখতে পান। এর মানে তার মা স্বেচ্ছায় গেছেন।

পিবিআই পুলিশ সুপার বলেন, চলতি মাসেই মামলার প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। কিছু রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছি। যার মধ্যে নিখোঁজের আধাঘণ্টা আগে রহিমা বেগমের বিকাশে টাকা এসেছিল। এই ঢাকা কোথা থেকে এসেছিল আর কেনই এসেছিল। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এর আগে ২৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ১১টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুসের বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশের একটি টিম রাত ২টার দিকে তাকে নিয়ে দৌলতপুর থানায় পৌঁছায়। পরদিন বেলা ১১টার দিকে পুলিশ রহিমা বেগমকে পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করে। ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে রহিমা বেগমকে তার ছোট মেয়ে আদুরী খাতুনের জিম্মায় দেন আদালত। পরে খুলনা মহানগরীর বয়রা এলাকায় আদুরীর বাসায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে খুলনা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক আল আমিনের কাছে জবানবন্দি দেন রহিমা বেগম।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর মহেশ্বরপাশার উত্তর বণিকপাড়ার নিজ বাসা থেকে টিউবওয়েলে পানি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। এরপর আর ঘরে ফেরেননি তিনি। স্বামী ও ভাড়াটিয়ারা নলকূপের পাশে ঝোপঝাড়ে তার ব্যবহৃত ওড়না, স্যান্ডেল ও বালতি দেখতে পান। সেই রাতে তাকে খুঁজতে আত্মীয়-স্বজন, আশপাশসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেন সন্তানরা।

রহিমার ছয় সন্তান কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কখনো মাইকিং, কখনো আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারস্থ হয়েছেন মায়ের খোঁজে। সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনও করেন। এ ঘটনায় ২৮ আগস্ট তার মেয়ে আদুরী খাতুন বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় অপহরণ মামলা করেন।