ফুটবল মাঠ হঠাৎ মৃত্যুপুরী

গত শনিবারের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ স্তরের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব আরেমা এফসি ও পেরসেবায়া সুরাবায়া। সেখানে স্বাগতিক দল আরেমা ৩-২ গোলে হেরে যায় পেরসেবায়ার কাছে। দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে পেরসেবায়ার কাছে এটাই ছিল আরেমার প্রথম হার।

ইন্দোনেশিয়ার নিরাপত্তাবিষয়ক জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী মাহফুদ এমডি বলেছেন, ‘গতকাল রাতে ওই স্টেডিয়ামে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি দর্শক উপস্থিত ছিল। ধারণক্ষমতা ৩৮ হাজার হলেও গতকাল সেখানে ৪২ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিল। ’

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, হেরে যাওয়া আরেমার অন্তত তিন হাজার উত্তেজিত সমর্থক ম্যাচের পর মাঠের ভেতরে ঢুকে পড়ে। পূর্ব জাভার পুলিশপ্রধান নিকো আফিন্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, সমর্থকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে থাকলে এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।

কাঁদানে গ্যাসে সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় হুড়োহুড়ি। চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পদদলিত এবং শ্বাসরুদ্ধ হয় অনেক মানুষ। এভাবেই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

প্রাথমিক খবরে নিহতের সংখ্যা ১৭৪ বলে জানিয়েছিলেন স্থানীয় কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা। তবে পূর্ব জাভার ডেপুটি গভর্নর এমিল দারদাক গতকাল রাতে বলেন, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ১২৫। কাউকে কাউকে দুবার গোনা হয়ে থাকতে পারে বলে জানান তিনি।

স্টেডিয়ামের নিকটবর্তী কানজুরুজান হাসপাতালের প্রধান ববি প্রবোও বলেছেন, ঘটনাস্থল থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ কাঁদানে গ্যাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে হাসপাতালে আসে। তাদের অনেকে শ্বাসকষ্টে ভুগছে। মানসিক অস্থিরতার মধ্যেও ছিল কেউ কেউ।

ববি স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, কিছু ভুক্তভোগীর মস্তিষ্কে আঘাত লেগেছে। নিহতদের মধ্যে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুও রয়েছে।

গতকাল ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো দেশটির ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে বলেছেন, ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত লিগের বাকি ম্যাচগুলো স্থগিত রাখতে। গতকালের ঘটনাটিই যেন দেশের ‘সর্বশেষ ফুটবল ট্র্যাজেডি’ হয়—এমন ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ইন্দোনেশিয়ার সরকার এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছে। পদদলনের কারণ খুঁজে বের করার জন্য তদন্তের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে তারা।

বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী মাঠে নিরাপত্তাকর্মীরা কখনোই আগ্নেয়াস্ত্র কিংবা ‘দর্শক নিয়ন্ত্রণে গ্যাস’ ব্যবহার করতে পারেন না। পূর্ব জাভার পুলিশ আইনটির কথা জানত কি না সেই প্রশ্নের তাত্ক্ষণিক কোনো জবাব পায়নি রয়টার্স।

ইন্দোনেশিয়ার মানবাধিকার কমিশনের প্রধান জানিয়েছেন, সংস্থাটি কাঁদানে গ্যাসের ব্যবহারসহ গ্যালারির নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে তদন্ত করবে।

ইন্দোনেশিয়ার ক্রীড়ামন্ত্রী জাইনুদ্দিন আমালিও জানিয়েছেন, তাঁর মন্ত্রণালয় ম্যাচের নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যালোচনা করবে।

তিনি বলেন, “এটি দুঃখজনক ঘটনা, যা আমাদের ফুটবলকে এমন সময়ে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ করেছে যখন সমর্থকরা স্টেডিয়ামে বসে ফুটবল খেলা দেখতে পারছে। ”

এটি দেশটির শীর্ষ লিগ, যা বিআরআই লিগা ওয়ান নামে পরিচিত। এই দুর্ঘটনার পর সব খেলা এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছে ইন্দোনেশিয়া ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।

আরেমাকে বাকি মৌসুমের জন্য ঘরের মাঠে খেলার আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সংস্থাটি। তারা জানিয়েছে, নিজেদের একটি তদন্তদল মালাংয়ে পাঠাবে। সূত্র : বিবিসি ও রয়টার্স।

ইন্দোনেশিয়ার কানজুরুজান স্টেডিয়ামে শিশুকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছেন দুই ব্যক্তি। ছবি : বিবিসি