২ দিন আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় যুবককে নির্যাতন

সারা শরীর জুড়েই নির্যাতনের অসংখ্য চিহ্ন। হাত-পা বেঁধে বাঁশের সাথে ঝুলিয়ে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে চোখে। উলঙ্গ করে পুরুষাঙ্গে পানির বোতল ঝুলিয়েও চালানো হয়েছে নির্যাতন।

শুধু তাই নয়, লোহার রড গরম করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঝলসে দেওয়ায় শরীরের রক্ত জমাট বেঁধে ধারণ করেছে কালো কুচকুচে বর্ণ। এমন লোমহর্ষক ঘটনা যেন হার মানায় মধ্যযুগীয় পাশবিক কায়দায় নির্যাতনকে।

এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে মাদারীপুরের রাজৈরে। কথিত চুরির অভিযোগ এনে গত বুধবার রবিউল শেখ (৩০) নামে এক দোকানদারকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে দুদিন আটকে রেখে এমন মধ্যযুগীয় পাশবিক কায়দায় নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গুরুতর অবস্থায় উদ্ধারের পর রবিউল শেখকে হাসপাতালে ভর্তি করে। এই ঘটনায় মূলহোতা অভিযুক্ত সুমন শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ভুক্তভোগী রবিউল শেখ রাজৈর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের ঘোষালকান্দি এলাকার মৃত খোকন শেখের ছেলে। তার টেকেরহাট বন্দর এলাকায় ‘মায়ের দোয়া ফল ভাণ্ডার’ নামে একটি ফলের দোকান রয়েছে। রবিউলের সংসারে তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে রয়েছে। এদিকে বাবা-মা হারা রবিউলের চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে পরিবারের।

অভিযুক্ত সুমন শেখ রাজৈর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের ঘোষালকান্দি এলাকার মৃত ফজলু শেখের ছেলে। স্থানীয় রাজনৈতিক ছত্রছাঁয়ায় পূর্বেও সুমন একাধিক এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

ভুক্তভোগীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, কথিত ইজিবাইক চুরির অভিযোগ এনে গত বুধবার রাতে মাদারীপুরের রাজৈরের টেকেরহাট বন্দর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় রবিউল শেখকে। পরে পাশের গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর এলাকার একটি ঘরে আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দার উলঙ্গ করে পাশবিক নির্যাতন চালায় সুমন শেখসহ অজ্ঞাত ৪-৫ জন।

পরে স্থানীয়রা বিষয়টি বুঝতে পেরে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে রবিউল উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পুলিশ। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রচণ্ড ব্যথা আর যন্ত্রণায় হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করে কাতরাচ্ছেন রবিউল শেখ। তার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নির্মম নির্যাতনের কথা মনে করে বারবার আঁতকে উঠছেন তিনি।

এ বিষয়ে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. হামিদা আক্তার বলেন, রবিউলের শরীরে মারধর ও আঘাতের বেশ চিহ্ন রয়েছে। তার অবস্থা স্থিতিশীল। রবিউলের উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।

মাদারীপুরের রাজৈর থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এই ঘটনায় এরই মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত সুমন শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকিদের ধরতেও আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।