এবার মার্কিন ডলারের দর একলাফে রাড়ল ১০ টাকার বেশি। এর আগে ডলারের দর ৫০ পয়সা বাড়ানোকেই দেখা হতো বড় সিদ্ধান্ত। আজ মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এই মুদ্রাটির বিনিময় হার ঠিক করে দিয়েছে ১০৬ টাকা ১৫ পয়সা। আগের দিন দাম এক টাকা বেড়ে হয়েছিল ৯৬ টাকা। অর্থাৎ এক দিনে বাড়ল ১০ টাকা ১৫ পয়সা ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। বলাই বাহুল্য এই সিদ্ধান্তে ইতিহাস সৃষ্টি করল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, ডলারের দাম গতকাল সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) বাড়িয়ে ৯৬ টাকা করা হয়েছে। মঙ্গলবারও এই দামে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করেছে। তবে ওয়েবসাইটে কেন ডলারের দাম এত বেশি দেখানো হচ্ছে, তা এখনো জানতে পারিনি।
মূলত ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশে দেশে মুদ্রার দরপতনের যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। সাত মাসের কম সময়ে দেশের মুদ্রার দরপতন হলো প্রায় ২৫ শতাংশ। এই যুদ্ধ শুরুর আগে দর ছিল ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা। বাড়ল ২১ থেকে ২২ টাকা। দুই দিন আগে ব্যাংকারদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ বা এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রার ডিলার ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন বা বাফেদা ঠিক করে আন্তঃব্যাংকে ডলারের বিনিময় হার হবে ১০৬ টাকা ১৫ পয়সা। এখন সেই দরকেই আন্তব্যাংক দর হিসেবে বেছে নিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, টাকা ও ডলারের বিনিময়মূল্য ব্যাংকগুলো নির্ধারণ করেছে। জোগান ও চাহিদা এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) দামের ভিত্তিতে ডলারের এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক দৈনন্দিন ভিত্তিতে ডলার কেনাবেচার মধ্যে নেই।
তবে বাজার বিবেচনায় প্রয়োজন হলে কেনাবেচা করবে।বিক্রয়মূল্যের পাশাপাশি ডলারের নতুন ক্রয়মূল্যও ঘোষণা হয়েছে। জানানো হয়েছে, ১০১ টাকা ৬৭ পয়সায় ব্যাংকগুলো ডলার কিনবে। ক্রয় ও বিক্রয়ের মধ্যে প্রায় ৫ টাকা ব্যবধানও রেকর্ড। গতকাল নিজেদের মধ্যে নতুন এই দরে ডলার বিক্রি করেছে ব্যাংকগুলো। এটাকে আন্তব্যাংক লেনলেন দর বলে।
প্রসঙ্গত, প্রায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে এই আন্তব্যাংক লেনদেন বাজার কার্যত অচল ছিল। সরকারি আমদানি ব্যয় মেটাতে অল্প কিছু ডলার বিক্রি করা হতো।ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে এখন এই দরে ডলার কেনাবেচা করবে। এটাকেই আন্তব্যাংক দাম বলা হচ্ছে। এত দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে দামে ডলার কেনাবেচা করত, সেটি আন্তব্যাংক দর হিসেবে উল্লেখ করা হতো। সেই দামই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে আসছিল
বাংলাদেশ ব্যাংক।নতুন এই দর ঠিক করার পর খোলাবাজারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দরের মধ্যে যে আকাশচুম্বি পার্থক্য ছিল, তা অনেকটাই কমে আসবে। খোলাবাজারে এদিন ডলার কেনাবেচা হয়েছে ১১৪ থেকে ১১৫ টাকায়। অর্থাৎ আগের দিনের আন্তব্যাংক লেনদেনের তুলনায় দর বেশি ছিল ১৭ থেকে ১৮ টাকা, যা এখন নেমে আসবে ৮ থেকে ৯ টাকা।