একে একে ৯ লাশ: ভয়াবহ বর্ণনা দিলেন বেঁচে ফেরা যাত্রীরা

ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১২টা। মুষলধারে বৃষ্টি হলেও বেপরোয়া গতিতে চলছিল গাড়ি। এর মধ্যেই হঠাৎ বিকট শব্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল সব। একে একে লাশ হলেন ৯ জন।
এভাবেই রংপুরের তারাগঞ্জে দুই বাসের সংঘর্ষের ভয়াবহ বর্ণনা দিচ্ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী ৪৫ বছর বয়সী মোস্তফা হোসেন। এ ঘটনায় এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে পাঁচজন ও হাসপাতালে মারা যান চারজন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোস্তফা হোসেন বলেন, ঠাকুরগাঁও থেকে ইসলাম পরিবহনে উঠি। রাত ১২টার দিকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। গাড়িও দ্রুগতিতে চলছিল। হঠাৎ বিকট শব্দে মুহূর্তের মধ্যে কী যে হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারিনি। এরপর ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে আমাকে রমেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

চিকিৎসাধীন ২২ বছর বয়সী আব্দুর রহিম বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর শহরের সিও বাজার থেকে তারাগঞ্জ যাওয়ার জন্য জোয়ানা পরিবহনের বাসে উঠি। ওই সময় বৃষ্টি হচ্ছিল। বাসে ওঠার আধা ঘণ্টার মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

ঠাকুরগাঁও থেকে ছেড়ে আসা ইসলাম পরিবহনের যাত্রী চিকিৎসাধীন মোজাফফর হোসেন বলেন, আমরা তখন বাসের ভেতর। চোখে ঘুম ঘুম ভাব। বিকট শব্দে শরীরে ধাক্কা লাগে। এরপর আর কিছুই বলতে পারব না। মনে হয় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি। পরে চোখ মেলে দেখি আমি হাসপাতালে।

তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব মোর্শেদ বলেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে পিচ্ছিল সড়কে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে রাত তিনটা পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলে মারা যাওয়া পাঁচজনের মরদেহ তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানায় রয়েছে।

রমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. ফরহাদুজ্জামান বলেন, দুর্ঘটনায় আহত চারজন ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এর মধ্যে দুজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক অলিউল হাসান জুয়েল ও গাইবান্ধার সাদেক আলী।

রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর-দিনাজপুর আঞ্চলিক সড়কের তারাগঞ্জের খারুভাজ সেতুর কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪০ জন ভর্তি রয়েছেন।