রিটার্ন না দেওয়া ৫০ লাখ টিআইএনধারীর জন্য এবার বিশেষ সুযোগ দিতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। টিআইএন সনদ নিয়েও এত দিন যেসব করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা দেননি, তাঁরা জরিমানা ছাড়াই এ অর্থবছরে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। এনবিআর সূত্র জানায়, মূলত করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়াতেই এ সুযোগ দিয়েছে সংস্থাটি। এদিকে, নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসেই রাজস্ব আয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে এনবিআর। এ মাসের লক্ষ্যমাত্রা থেকে অন্তত ৪ হাজার ৬৬ কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে সংস্থাটি। সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থবছরের প্রথম দিকে রাজস্ব আয়ের গতি একটু শ্লথ থাকে। ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। সামনে স্বাভাবিকভাবেই রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি হবে।
জানা যায়, দেশে বর্তমানে ৭৬ লাখ টিআইএনধারী রয়েছেন। তবে এ বিরাট সংখ্যার মাত্র ২৬ লাখ টিআইএনধারী প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন জমা দেন। বাকি ৫০ লাখ টিআইএনধারীই রিটার্ন জমা দেন না। এই রিটার্ন জমা না দেওয়াদের জন্যই বিশেষ সুযোগটি এবার দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সবাইকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনা হয়েছে। এনবিআরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, টিআইএন নেওয়ার পর কেউ আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে, তাঁকে প্রতিবছরের জন্য সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা গুনতে হয়। কেউ একবার রিটার্ন না দিলে এই জরিমানার ভয়ে পরবর্তী সময়ে রিটার্ন দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। পাশাপাশি রিটার্ন দাখিল করলে কর অফিসে হয়রানির ভীতিও রিটার্ন দাখিল না করার কারণ বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে আয়কর বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা দেখছি যে বিপুলসংখ্যক করদাতা টিআইএন নিলেও তাঁদের বড় একটি অংশ আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন না। এসব টিআইএনধারীকে যদি করজালে এনে নিয়মিত করা যায়, তবে বছর শেষে একটি উল্লেখযোগ্য অঙ্কের রাজস্ব পাওয়া যাবে। তিনি মনে করেন, জরিমানা ছাড়া এবার যে সুযোগটি এনবিআর দিচ্ছে, আশা করা যায়, করদাতারা এ সুযোগটি নেবেন। কারণ সামনে সরকারি অন্তত ৩৮ ধরনের সেবা নিতে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র লাগবে।
রাজস্ব খাত বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, এনবিআরের এ ধরনের উদ্যোগ ইতিবাচক। এতে একদিকে করদাতারা জরিমানা ছাড়া নিজেদের আয়কর রিটার্ন হালনাগাদ করতে পারবেন; অন্যদিকে সরকারও একটি উল্লেখযোগ্য হারে রাজস্ব পাবে। সাধারণত যাঁদের বছরে তিন লাখ টাকার বেশি আয় আছে, তাঁদের সবার টিআইএন নেওয়া ও প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ সময়ে ৪ হাজার ৬৬ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। জুলাই মাসে ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময়ে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ১৬ হাজার ৫২০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে শুল্ক খাতের রাজস্ব আয় ভালো থাকলেও আয়কর ও ভ্যাট খাত পিছিয়ে রয়েছে। মূলত আমদানি পণ্যের দাম বাড়ায়, শুল্ক আদায় বেশি হচ্ছে। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।