কক্সবাজারে শক্তির জানান দিলো বিএনপি

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও ভোলায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল ও শ্রমিকদলের দুই নেতা হত্যার প্রতিবাদে কক্সবাজারের রাজপথে মিছিল করেছে কক্সবাজার ৩ সংসদীয় আসনের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বুধবার (২৪ আগস্ট) বেলা দুইটা থেকে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জমায়েত হয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরে শহরের প্রধান সড়কে মিছিল বের করে সাবেক সংসদ সদস্য কাজলের নেতৃত্বে জেলা বিএনপি।

এসময় ‘রাজপথের কাজল ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’, এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি’, ভোট চোর ভোট চোর, শেখ হাসিনা ভোট চোর ‘শেখ হাসিনার গদিতে আগুন জ্বালাও একসাথে’ সহ নানা স্লোগানে প্রায়ই হাজার পঞ্চাশেক নেতাকর্মীর এই মিছিলের মাধ্যমে কক্সবাজারের রাজপথে দীর্ঘদিন পরে রাজপথে নিজের শক্তির জানান দিয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এমটাই মনে করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আর নেতৃত্ব দিয়েছেন কেন্দ্রিয় বিএনপির মৎস্যজীবি বিষয়ক সম্পাদক ও কক্সবাজার ৩ আসনের (কক্সবাজার-রামু- ইদগাঁ) সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল। গণমিছিল পূর্ব সমাবেশে কাজলের শক্তি জানানোর আভাস দিয়েছে খোদ দলটির নেতাকর্মীরা। এরআগে খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া, লুৎফুর রহমান কাজলসহ দলীয় নেতাকর্মীদের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে যায় সমাবেশস্থল। সাবেক সাংসদ কাজলের ডাকে গণমিছিল ও সমাবেশে যোগ দেয় বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। ঘন্টাখানেকের মধ্যে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয় ঈদগাহ ময়দান।

কক্সবাজার পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ছাড়াও ঈদগাঁও, রামু, সদরের প্রত্যেকটি ইউনিয়নের তৃণমূল নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন সরকারে মিছিল ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। দ্রব্যমূল্যর উর্ধ্বগতি ও ভোলায় পুলিশের গুলিতে নিহত দুইজনের প্রতিবাদে আয়োজিত গণমিছিলটা মুলত আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই করা হয়েছে। এই গণমিছিলের মাধ্যমের সরকার, প্রশাসন ও আওয়ামীলীগের কাছে আমরা একটি বার্তা দিতে চাই সেটি হলো কক্সবাজারের মাটি কাজলের ঘাটি। তারা যেন অতীতের মত ভোট ডাকাতির চিন্তা না করে।

কক্সবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল হুদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক সাবেক এমপি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, হয়তো অল্প সময়ে খবর আসবে, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু জনগণ তাকে পালানোর সুযোগ দিবে না। দুর্নীতি ও লুটপাটের কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব দিতে হবে।

প্রধান অতিথি বলেন, এটি কোন বিভাগীয় সমাবেশ না। কক্সবাজার অঞ্চলের একটি সমাবেশ মাত্র। এখানে উপস্থিতি প্রমাণ করে আওয়ামী লীগের অবস্থা কোন পর্যায়ে চলে গেছে। বিএনপির কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। সবাই শেখ হাসিনার পতন চায়। তিনি আরো বলেন, এই মিছিল আর বিএনপির মিছিল নেই, এটি সত্যিকারের গনমিছিলে পরিণত হয়েছে। বিএনপি’র নেতা কাজল এখন গণমানুষের নেতাই পরিণত হয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদ এখন ভারতের কারগারে বন্দী। তবে আর বেশিদিন সেখানে থাকবেন না। খুব শ্রীঘই বীরের বেশে আপনাদের নেতা আপনাদের কাছে ফিরে আসবে।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, আপনারা অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সমাবেশে যোগদান করেছেন। শুকরিয়া। যারা বলেছিলেন, বিএনপি শেষ। আপনারা দেখে যান, বিএনপি আছে কিনা? সিংহের মতো গর্জন কক্সবাজারে। বিএনপি মানে আগামীর বাংলাদেশ। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের দাবি আদায়ের জন্য আমরা সমবেত হয়েছি। রাতের অন্ধকারে ডিজেল পেট্রোলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে সিন্ডিকেট। ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে সবকিছু। দেশে চরম দুর্যোগ চলছে। সরকারের হাতে কোন কিছুর নিয়ন্ত্রণ নেই। সাধারণ মানুষ চাহিদামতো খেতে পারছে না।

বিএনপিকে দেশপ্রেমিক ও ভদ্র মানুষের দল আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ব্যবহারে বংশের পরিচয়। আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকে কবর থেকে তুলে আনব না। আমরা ভদ্রতা জানি। আওয়ামী লীগ যেভাবে আমাদের নেতাদের গালিগালাজ করে, সেরকম গালিগালাজ, অশালীন বক্তব্য আমরা দিব না।

জেলা ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি সরওয়ার রোমনের সঞ্চালনায় মিছিল পূর্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন, জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হাসান পলাশ, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম কাউন্সিলর, কক্সবাজার পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবু ছিদ্দিক ওসমানী, জেলা কৃষক দলের আহবায়ক পৌর কমিশনার আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নারীনেত্রী নাসিমা আকতার বকুল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইউনুছ।

এছাড়াও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জিসান উদ্দিন জিসান, ঈদগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম চেয়ারম্যান, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, কক্সবাজার শহর যুবদলের সভাপতি আজিজুল হক সোহেল, রামু বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বশর বাবু, বিএনপি নেতা ছুরত আলম, জেলা ছাত্র দলের সভাপতি শাহাদাত হোসেন রিপন, সিনিয়র সহসভাপতি সাইফুর রহমান নয়ন, সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক মিজানুল আলম, শহর ছাত্র দলের সদস্য সচিব ইনজামামুল হক, ঈদগাঁও উপজেলা ছাত্র দলের সভাপতি নুরুল হুদা নকশাসহ বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশ শেষে বুধবার বিকাল ৪টায় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান থেকে একটি মিছিল বের হয়ে কক্সবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে হাসেমিয়া মাদ্রাসা মাঠে গিয়ে শেষ হয়।